খার্তুম থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে নীল নদ পেরিয়ে অনিশ্চিতের পথে সুদান ও অন্যান্য দেশের বাসিন্দারা। রবিবার মিশরের অসওয়ান এলাকায়। ছবি: রয়টার্স।
সংঘর্ষ বিরতি চলছে। তার মধ্যেও বার বার গোলাগুলির শব্দে কেঁপে উঠছে সুদানের রাজধানী খার্তুম।
সপ্তাহ তিনেক ধরে চলা সেনা এবং আধাসেনার এই সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন ৫২৮ জন। এ দিন এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। জখমের সংখ্যা ৪৫০০-তে পৌঁছে গিয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। যদিও আদতে এই সংখ্যা আরও বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে বিভিন্নমহলের তরফে।
এ দিকে, প্রবল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শুক্রবার সংঘর্ষ বিরতির মেয়াদ খাতায়-কলমে বাড়ানো হলেও খার্তুমে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ থেকে শুরু করে জাতীয় সম্প্রচারক সংস্থার সদর দফতর বা সেনা ছাউনি— সব জায়গাতেই দেখা গিয়েছে সংঘর্ষের চিত্র। চলেছে গুলি, পড়েছে বোমা। যার জেরে অচিরেই কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যেতে দেখা যায় শহরের আকাশ।
৫০ লক্ষের বেশি মানুষের শহর এই খার্তুম এখন রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্র। দুই যুযুধান পক্ষের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের থাকার জন্য দখল নেওয়া হয়েছে বহু বাড়ি, হাসপাতাল এমনকি দোকানেরও। যুদ্ধ বিদীর্ণ এই দেশ থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই পুরোদমে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশের তরফে। চলছে ভারত সরকারের উদ্ধার অভিযান ‘অপারেশন কাবেরী’ও। তবে ব্রিটেন শনিবারই তাদের উদ্ধার পর্বে ইতি টেনেছে।
এই হিংসার রাজত্ব থেকে নিজেদের বাঁচাতে চরম ঝুঁকি নিয়েও সীমান্ত পেরোচ্ছেন হাজার হাজার সুদানবাসী। কমপক্ষে ৫০ হাজার উদ্বাস্তু ইতিমধ্যেই সুদান থেকে চাড, মিশর, দক্ষিণ সুদান এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের মতো পড়শি দেশগুলিতে এসে উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা এবং শিশু।
সুদানের অন্যান্য অংশের বদলে খার্তুম থেকে নিরাপদে বেরোনোর রাস্তাটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে উদ্ধারকারীদের তরফে। পোর্ট সুদানে অপেক্ষা করছে উদ্ধারকারী জলযানগুলি। তবে সাধারণের পক্ষে সেই পর্যন্ত এসে পৌঁছনোর রাস্তাটি দীর্ঘ এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলি। যেমন, খার্তুমের বাইরে প্যারামিলিটারির সদস্যরা উদ্বাস্তুদের পথরোধ করছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে সম্প্রতি। আকাশ পথে উদ্ধারের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি কমছে না। সম্প্রতি যেমন আকাশে ওড়ার সময়ে একটি তুর্কি উদ্ধারকারী বিমানের গায়ে গোলা এসে লাগে বলে জানা গিয়েছে।
যে সব সাধারণেরা এখনও সুদান ছাড়তে পারেননি তাঁদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। খার্তুম তো বটেই তার আশপাশের অঞ্চলগুলিতেও পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যেমন খার্তুমের পশ্চিমে অবস্থিত শহর ওমদুরম্যানে জ্বালানি প্রায় অমিল। ফলে অনেকে নিজেদের উদ্যোগে অঞ্চল ছাড়ার পরিকল্পনা করলেও সেই সুযোগটাই এখন প্রায় নেই। যাঁরা কোনও মতে বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন তাঁদের খাবারের জোগানেও এ বার টান পড়তে শুরু করেছে। তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জোগানও।
যদিও তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ সংঘর্ষকারীরা। যুদ্ধক্ষেত্রের এক চিলতে জমি না-ছাড়ার পণেই এখনও অদম্য ভাবে টিকে তারা। বিরতি উপেক্ষা করে চলছে লড়াইও।