বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ়-জ়ামান। ছবি: রয়টার্স।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পরে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক কিছুটা সহজ হবে বলে আশা করছে বিদেশ মন্ত্রক। কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, ইতিমধ্যে খুব সামান্য হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি ভারসাম্যের জায়গা তৈরি হচ্ছে। তা কত দূর টেকসই হবে, তা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না, কারণ ফের অস্থিরতা তৈরির বিভিন্ন উপাদান রয়েই যাচ্ছে।
আপাতত যে দু’টি বিষয়কে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছে কূটনৈতিক শিবির তার একটি হল বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামানের সাম্প্রতিক বক্তব্য। বাংলাদেশের একটি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বার্তা দিয়েছেন, ঢাকা এমন কোনও পদক্ষপ করবে না যা তার প্রতিবেশীর কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে বোঝাপড়ার মাধ্যমে এগোনোর কথাই বলেছেন তিনি।
পাশাপাশি বাংলাদেশে আটক ৯৫ জন ভারতীয় মৎস্যজীবী ও নৌকর্মী এবং ভারতে আটক ৯০ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী ও নৌকর্মীর পারস্পরিক আদানপ্রদান প্রক্রিয়া আজ শুরু হয়েছে, যা রবিবারের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। প্রসঙ্গত গত অক্টোবর-নভেম্বরে বাংলাদেশের জলসীমায় আটক হওয়া ভারতীয় মৎস্যজীবী ও নৌকর্মীদের এত দিন সে দেশে রেখে দেওয়া হয়েছিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতির কারণে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। ফলে আজ শুরু হওয়া এই আস্থাবর্ধক পদক্ষেপটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের মতে, তাঁদের জন্য ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশ অনেক বিষয়েই ভারতের উপর নির্ভর করে। আবার ভারতও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের থেকে সুবিধা পায়। জেনারেল ওয়াকারের কথায়, “এটা একটা দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক।” পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সম্পর্ক এগিয়ে যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, বাংলাদেশ প্রতিবেশীদের সঙ্গে এমন কিছু করবে না, যা সেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী। তিনি চান, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিও যেন তা বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী কিছু না করে। সরাসরি কোনও প্রতিবেশীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “সীমান্তে আমাদের লোকজনকে হত্যা করবে না। আমরা প্রাপ্য জল পাব। এতে তো কোনও অসুবিধা নেই!” বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের মতে, “দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রাখা প্রয়োজন। ভারতের অনেকেই বাংলাদেশে কাজ করছেন। আবার বাংলাদেশ থেকেও অনেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। ভারত থেকে পণ্যও কিনছে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার সঙ্গে ভারতের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে।”
অন্য দিকে মৎস্যজীবীদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পাশাপাশি ভারতে আটক বাংলাদেশের দু’টি ফিশিং ভেসেল এবং বাংলাদেশে আটক ভারতের ছয়টি ফিশিং বোটও হস্তান্তর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। গত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার নিকটে ‘এফভি লায়লা-২’ এবং ‘এফভি মেঘনা-৫’ নামে দুটি বাংলাদেশি ফিশিং ভেসেল-সহ মোট ৭৮ জন এবং গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি মাছ ধরার নৌকা ‘এফ বি কৌশিক’ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ডুবে গেলে এর ১২ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হন। তাঁদের কারামুক্তি ঘটেছে। ৭৮ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী ও নৌকর্মী আপাতত ওড়িশার পারাদ্বীপে ভারতীয় উপকূল বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এবং ১২ জন পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপে রয়েছেন। রবিবার আন্তর্জাতিক জলসীমায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে তাঁরা তাঁদের ফিশিং ভেসেল-সহ চট্টগ্রামে ফেরত যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।