মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।
সংবিধান বাতিল, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পদত্যাগ, আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনকে জঙ্গি তকমা দিয়ে নিষিদ্ধ করা-সহ ৫ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেছে ঢাকায়। এর পরে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গভবন-এর বাইরে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান শুরু করে। পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এই শ’দুয়েক বিক্ষোভকারীকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের সরায়নি। রাতের দিকে বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে প্রথম পুলিশকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সাউন্ড গ্রেনেড ফাটায়, লাঠিচার্জ করে। এতে ৫ জন জখম হয়েছেন। মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লা ও সমন্বয়ক সারজিস আলম উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভে ইতি টানার ডাক দিয়ে বলেন— আগামী ৩ দিনের মধ্যে তাঁরা যোগ্য রাষ্ট্রপতি বেছে ৭ দিনের মধ্যে পদে বসাবেন। সূত্রের খবর, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২৫ তারিখে সেনাপ্রধান আমেরিকা থেকে ফেরার পরেই তাঁরা এ বিষয়ে এগোবেন।
রাষ্ট্রপতিকে সরানোর দাবি গত কয়েক দিন ধরেই তুলছিল কোটা-বিরোধী ছাত্ররা। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, দেশছাড়া হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনও ‘দালিলিক প্রমাণ’ নেই। এর পরেই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল রাষ্ট্রপতিকে ‘মিথ্যাচারী’ বলে তাঁকে সরানোর দাবি তোলেন। একই দাবি তোলেন ছাত্র সমন্বয়কেরাও। এর পরে বঙ্গভবন থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, হাসিনার পদত্যাগের প্রমাণ না থাকলেও তিনি দেশত্যাগ করায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বরিষ্ট বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পদক্ষেপ করেন। এই সরকারের বৈধতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু ২৪ মঙ্গলবার শহিদ মিনারে সভা ডাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে হাসনাত আবদুল্লাকে সংগঠনের আহ্বায়ক ঘোষণা করার পাশাপাশি ৫ দফা দাবি তুলে তা আদায়ের জন্য ৭ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। এই ৫ দফার মধ্যে যেমন দেশের সংবিধান ‘সম্পূর্ণ ভাবে বাতিল’ করার দাবি রয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে তাঁর ইস্তফাও
চাওয়া হয়েছে।
ছাত্রদের দুই প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে থাকলেও তাদের এই আকস্মিক অবস্থান বদলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কারণ সরকার সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল না করে সেগুলি সংস্কারে কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু ছাত্র সংগঠনটি ৭ দিনের মধ্যে ‘মুজিববাদী’ সংবিধান সম্পূর্ণ বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনার দাবি তুলেছে। রাষ্ট্রপতিকে সরালে সংবিধানের সঙ্গে এই সরকারের একমাত্র যোগসূত্রটুকুও বিচ্ছিন্ন হবে বলে তাঁকে রেখে দেওয়ার পক্ষে সরকারের একাংশ।
এ দিন বিকেল থেকে ছাত্র-জনতার সমর্থক দাবি করে শ’খানেক লোক রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে তাঁর বাসভবনের সামনে অবস্থান শুরু করেন। কোটা-বিরোধীদের সভার পরে লোকসংখ্যা দ্বিগুণ হয়। তারাই রাতের অন্ধকারে পুলিশের উপরে হামলা শুরু করে। ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করে। শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ায় ভিড় কিছুটা পিছু হটে। কিন্তু ফের তারা আগের জায়গায় বসে পড়ে। রাতে ছাত্রনেতাদের নির্দেশে বিক্ষোভকারীরা ফিরে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে নতুন করে অশান্তি শুরু হল।