সন্ত্রাস হানায় তিন জঙ্গি-সহ মৃত্যু হয় মোট সাত জনের। ছবি: পিটিআই।
সাময়িক বিরতির পর গত কাল ফের জঙ্গি হানায় কেঁপে উঠেছিল পাকিস্তান। এ বারের নিশানা ছিল করাচির পুলিশ সদর দফতর। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১০মিনিট নাগাদ চালানো এই সন্ত্রাস হানায় তিন জঙ্গি-সহ মৃত্যু হয় মোট সাত জনের। যার মধ্যে রয়েছেন দুই পুলিশ আধিকারিকও। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৯জন। কারা এই হানা চরিতার্থ করল তা নিয়ে নানান জল্পনার মাঝেই এক বিবৃতি দিয়ে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)।
পাক প্রশাসন সূত্রের খবর, একটি সাদা গাড়িতে করে এসেছিল জঙ্গিরা। গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে পুলিশ সদর দফতরের ভিতরে ঢোকে তারা। এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই গুলি এবং বিস্ফোরণের শব্দে চত্বরটি ভরে ওঠে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। পাল্টা জবাব দেয় পুলিশও। পুলিশকে সাহায্য করতে যোগ দেয় আধাসেনা। জঙ্গি এবং বাহিনীর গুলি বিনিময় চলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে যৌথ চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত জঙ্গিমুক্ত ঘোষণা করা হয় পুলিশ সদর দফতরটি।
এই ঘটনার পিছনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা যে সময়ে আসে সে সময় সদর দফতরটির তিনটি চেকপোস্টে কোনও পুলিশ ছিল না। এমনকি জঙ্গিরা পিছনের দেওয়াল টপকে ভিতরে ঢুকলেও তা নাকি কারও চোখেই পড়েনি! পাঁচিলের উপরে থাকা কাঁটাতারটিও কাটা ছিল বলে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তা ছাড়া যে দিকগুলি থেকে জঙ্গিরা এসেছিল সেখানে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই বলে জানা গিয়েছে।
জঙ্গিদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ থেকে এক-৪৭ রাইফেল-সহ বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তা ছাড়া পাওয়া গিয়েছে খাবারের বেশ কিছু প্যাকেটও। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, লম্বা সময়ের অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েই এই হামলা চালিয়েছিল ওই জঙ্গিরা। সেই মতো প্রথমেই তিন দিক থেকে আলাদা আলাদা করে ঢুকে কমপক্ষে ৪০-৫০ জন পুলিশকর্মীকে আটকে দেয় তারা।
গত বছর নভেম্বরে পাক সরকার এবং টিটিপির মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভাঙার পর থেকেই নিরাপত্তা বাহিনী ও তাদের ঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে সন্ত্রাস হানার মাত্রা বাড়িয়েছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান। শুক্রবারের এই হামলা সেই তালিকায় নতুন সংযোজন বলে জানাচ্ছেন গোয়েন্দারা। আফগানিস্তানের তালিবানের সহযোগী বলে পরিচিত এই সংগঠনটির বেশির ভাগ নেতা এবং সদস্যরাই পাক সীমান্তে লুকিয়ে রয়েছে বলে দাবি গোয়েন্দা সূত্রের।