প্রতীকী ছবি।
ই-মেলটা পেয়ে যুগপৎ দুঃখ এবং আনন্দ হল। ‘‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, এ বার পুজো বন্ধ রাখতে বাধ্য হলাম।’’
সত্যিই তো, এই ভয়াবহ সময়ে কী ভাবে দুর্গাপুজো করা যায়? স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় পুজো দেখছি আজ ২০ বছর। সবাই মিলে আনন্দ করি পুজোর পাঁচ দিন। রীতিমত দিন-ক্ষণ-তিথি দেখে পুজো হয়। ধুনুচি নাচ, ঢাকের বাদ্যি থেকে খাওয়াদাওয়া— সব। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রায় দরজায় কড়া নাড়ছে। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় স্কটল্যান্ডে মৃত্যুর হার যথেষ্ট কম। কিন্তু যে কোনও মৃত্যুই তো দুঃখজনক আর দুর্গাপুজোর সময় পারস্পরিক দূরত্ব মানা অসম্ভব। আরতির সময়, পুষ্পাঞ্জলি বা খাওয়ার সময় দূরত্ব বজায় রাখা যায় নাকি? আমাদের যারা বয়স্ক মানুষ আছেন, এই বিদেশে যারা আমাদের অভিভাবকের ছায়া দিয়ে আগলে রাখেন, তাঁদের অসুস্থতার কারণ যদি আমরা হই সেটা কি খুব ভাল হবে?
গত কয়েক বছর ধরে পুজো হচ্ছে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায়। এখানেও পুজো বন্ধ। আর এমনিতেও স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন ঘোষণাই করেছেন যে, যে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সর্বাধিক ২০ জন থাকতে পারবে। আর এডিনবরার পুজোর যা জনপ্রিয়তা, কোন ২০ জনকে বেছে নেবেন? অধিকাংশ ভারতীয় নিয়মকানুন মেনে চলতেই ভালবাসেন। অবশ্যই প্রবাসে তার ব্যতিক্রম হয় না। সুতরাং এ বার তাঁরা পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত তিন-চার বছর ধরে স্কটল্যান্ডের উত্তরে অ্যাবার্ডিনে পুজো হচ্ছে। এখানেও পুজো বন্ধ এ বছর। সুতরাং আমরা যারা প্রকৃত ‘প্যান্ডাল-হপার’ তারা গৃহবন্দি। সবই এক ভাইরাসের প্রকোপে।
এই সপ্তাহেই দৈনিক প্রায় আট থেকে ১৩ জন করে লোক মারা গিয়েছেন স্কটল্যান্ডে। মনে রাখতে হবে, ব্রিটেনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা গোটা পৃথিবীতে একেবারে প্রথম সারির। সেখানেও এত লোক মারা গিয়েছেন। বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো। এই পুজোর জন্যে আমরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি। দুর্গাপুজো বন্ধ রাখার মতো সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য তিনটে পুজোর কর্মকর্তাদের কোনও সাধুবাদই যথেষ্ট নয়। প্রাণের পুজো নিভৃতেও করা যায়, প্রাণের বিনিময়ে ঢাক বাজিয়ে পুজো করার প্রয়োজন আছে কি?
পুজো বন্ধ, কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়। জ়ুম, টিম বা গুগল মিটের মতো আধুনিক প্রযুক্তি এখন আমাদের জীবন জুড়ে। সুতরাং কম্পিউটারেই দেখা যাবে সাংস্কৃতিক উৎসব। বাড়িতে বসে রেকর্ড করে সবাই পাঠাও আর বাড়িতে বসেই দেখো। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষের আনন্দ উপভোগ করার প্রক্রিয়ারও পরিবর্তন হয়েছে। স্কটল্যান্ডের তিনটে পুজোই ভার্চুয়াল। পুজোর সাজগোজ ভার্চুয়াল। পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ভার্চুয়াল। এত ‘ভার্চু’ নিয়ে এর আগে কোনও দিন পুজো হয়েছে কি?