Afghan Women

আফগানিস্তানে কেন ফিরল পুরনো তালিবানি আইন? ‘পঞ্চশীল’ ভুলে নারীদের চাবুক, পাথর মারার শাস্তি

সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হয়েছে, ভয়াবহ মানবিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে নারীদের উপর দমন–পীড়নের নীতি আফগানিস্তানের তালিবান শাসককুলের ‘আত্মঘাতী পদক্ষেপ’।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪১
Share:

তালিবান জমানায় মহিলাদের বিক্ষোভ আফগানিস্তানে। ছবি: সংগৃহীত।

২০২১ সালের অগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতা পুনর্দখলের পরে স্বনির্ধারিত পাঁচ ‘সংযমের’ কথা বলেছিলেন তালিবান মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ। কিন্তু আড়াই বছরের মধ্যেই তা ভুলে গিয়ে শরিয়তি আইন প্রবর্তনের অছিলায় মহিলাদের উপর প্রকাশ্য-নিপীড়়নের নীতি কার্যকরে সক্রিয় হলেন তাঁরা।

Advertisement

শনিবার তালিবান প্রধান হিবাতুল্লা আখুন্দজাদা জানিয়েছেন, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জন্য মহিলাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা আবার চালু করছেন তাঁরা। সরকারি টিভি এবং রেডিয়োতে এক ‘অডিয়ো বার্তা’য় আখুন্দজাদার ঘোষণা, ‘‘ব্যভিচারের অপরাধে আমরা নারীদের বেত্রাঘাত করব। আমরা তাদের প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যা করব।’’

আফগানিস্তানে দ্বিতীয় বার ক্ষমতা দখলের পর প্রাথমিক ভাবে তালিবান জানিয়েছিল নারীদের অধিকার হরণের অভিপ্রায় তাদের নেই। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে স্পষ্ট হয়ে যায় নব্বইয়ের দশকের প্রথম দফার শাসনের মতোই এ বারও তাদের লক্ষ্য, ইসলামের নামে কট্টরপন্থী শাসন প্রতিষ্ঠা করা। উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ সংকুচিত করার পাশাপাশি পর্দাপ্রথা বাধ্যতামূলক করা এমনকি, একা বাড়ির বাইরে বার হওয়ার উপরেও নানা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে সেখানে। গত বছর রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানেই মহিলাদের উপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার।

Advertisement

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ক্রমশ অধিকারক্ষেত্র সংকুচিত হওয়ায় ক্ষোভ দানা বাঁধছে আফগানিস্তানের মহিলাদের মধ্যে। বিশেষত, সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী পাশতুন জনগোষ্ঠীর মহিলারা ইতিমধ্যেই রাজধানী কাবুল-সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তালিবানি নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আর তা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ বার ‘কড়া দাওয়াই’ নীতি প্রণয়ন করতে চলেছে আখুন্দজাদা বাহিনী।

দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পরেই পূর্বের ‘পশ্চিম-প্রভাবিত’ সংবিধান খারিজ করে দিয়েছিল তালিবান। এ বার পুরনো দণ্ডবিধি বাতিল করে শরিয়তি শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনছে তারা। মহিলা আইনজীবী ও বিচারক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি আফগান নজরদারি সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে যে, গত দু’বছরে তালিবানের নিযুক্ত বিচারক ৪১৭ জনকে প্রকাশ্যে বেত মারা এবং মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে ৫৭ জন মহিলা। দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে নাগরিকদের উদ্দেশে তালিবানের কড়া নির্দেশ— এই ‘শাস্তি-উদ্‌যাপন’-এ সকল পুরুষকে হাজির থাকতে হবে, কারণ, সেটা একরকম ‘সহবত পাঠ’, যা জরুরি।

২০২১-এ ঘোষিত ‘পঞ্চশীল’-এর অন্যতম মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থেকেও ইতিমধ্যেই সরে এসেছে তারা। আফিম চাষ এবং মাদক উৎপাদন তালিবান অর্থনীতির অন্যতম ‘স্তম্ভ’। বছর কয়েক আগের একটি রিপোর্ট বলছে, ড্রাগের ব্যবসা এবং চোরাচালান থেকে তালিবানের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। নীলকর সাহেবদের ধাঁচেই অধিকৃত এলাকায় কৃষকদের জোর করে আফিম চাষ করায় তারা। এ ছাড়া তালিবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মাদক তৈরির কারখানা রয়েছে বলেও অভিযোগ। আশ্বাস দিলেও বিপুল আয়ের এই উৎসে আঘাত করার সদিচ্ছা তালিবানের রয়েছে কি না, তা নিয়ে তিন বছর আগেই সন্দিহান ছিল আন্তর্জাতিক মহল। কার্যত তা মিলে গিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement