আবু মহম্মদ আল-জুলানি। — ফাইল চিত্র।
সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহীদের দাবি, ‘স্বাধীন’ হয়েছে দামাস্কাস। দেশ ছেড়ে বিমানে চেপে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। আর যাঁর জন্য ২৪ বছরের ‘সাম্রাজ্য’-এর পাট চুকিয়ে দেশছাড়া আসাদ, তিনি হলেন আবু মহম্মদ আল-জুলানি। ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) বাহিনীর প্রধান। এক সময় আল-কায়েদার সঙ্গে যোগ ছিল এই ইসলামিক গোষ্ঠীর। আমেরিকা ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে তাঁকে দাগিয়েছিল সেই ২০১৮ সালে। জুলানির মাথার দাম ধার্য করেছিল কয়েক কোটি টাকা। পরে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে তিনিই দাবি করেছিলেন, নিরীহদের খুনকে তিনি কখনওই সমর্থন করেন না। সেই জুলানির বাহিনী এখন দখল নিয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসের।
জুলানি এখন কোথায়, তা স্পষ্ট নয়। অজ্ঞাত জায়গা থেকে সংবাদ সংস্থা সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, এই ‘বিপ্লব’-এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা। পাশাপাশি, সিরিয়ায় মানুষের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা। ২০১৮ সালে এই জুলানির মাথার দাম এক কোটি ডলার ধার্য করেছিল আমেরিকা। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৪ কোটি টাকা। জুলানির এইচটিএসকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন’ ঘোষণা করেছিল। কে এই জুলানি?
১৯৮২ সালে সৌদি আরবে জন্ম জুলানির। জন্মের পরে প্রথম সাত বছর কেটেছিলে রিয়াধে। জুলানির বাবা ছিলেন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। ১৯৮৯ সালে সিরিয়ায় ফিরে আসে জুলানির পরিবার।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজ়িরার দাবি, ২০০৩ সালে আল-কায়দায় যোগ দিয়েছিলেন জুলানি। সে সময় পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালাচ্ছিল আমেরিকা। ২০১১ সালে আল-কায়েদার অধীনের নতুন ‘জাভাত আল-নুসরা’ গঠন করেন জুলানি। পরে তার নামই হয় এইচটিএস। আল-কায়দায় থাকার সময় আইএসআইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গেও কাজ করেছিলেন জুলানি। ২০২২ সালে সিরিয়ায় আমেরিকার বাহিনীর হাতে নিহত হন বাগদাদি। তার আগে ২০১৩ সালেই তাঁর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন জুলানি। এমনকি, তাঁর বিরুদ্ধে লড়াইও চালিয়েছিলেন, যখন বাগদাদি নুসরা ফ্রন্টের প্রধান হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার প্রায় আট বছর পরে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের সামনে নিজের এইচটিএস নিয়ে মুখ খুলেছিলেন জুলানি। দাবি করেছিলেন, নিরীহ মানুষের হত্যার বিরোধী তিনি। ২০২২ সালে বাগদাদির মৃত্যুর পরে ইসলামি স্টেট ভেঙে পড়লে আবার আত্মপ্রকাশ করেন জুলানি। সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে নিজের আধিপত্য কায়েম করেন তিনি। নিজের সরকারও গঠন করেন সেখানে। এ বার দামাস্কাস দখল করল তাঁর এইচটিএস। সেখানেই কি গড়বেন নিজের সরকার! না কি নির্বাচিত সরকার গড়ার পথে হাঁটবেন! উত্তর দেবে সময়।