মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
হামলা করে এ বার ঢাকার শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে নাটক বন্ধ করে দিল অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থক তথাকথিত ‘ছাত্র-জনতা’। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, শনিবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে এক দল মারমুখী লোক প্রায় এক ঘণ্টা ধরে হুজ্জোতি করা সত্ত্বেও পুলিশ বা সেনারা পরিস্থিতি সামলাতে আসেননি। শিল্পকলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত নাটকের মাঝখানে তিনি মঞ্চে উঠে ঘোষণা করেন, “এত ক্ষণ যুদ্ধ করে ব্যর্থ হলাম। জনতা এসে আগুন ধরিয়ে দিলে আরও ভয়ঙ্কর হবে। নাটকটি বন্ধ করে দেওয়া হল।’’
রবিবার বাংলাদেশে জেলহত্যা দিবসে প্রতি বছর শয়ে শয়ে মানুষ বনানীর কবরস্থানে সেই দিনে নিহত চার জাতীয় নেতার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন। কিন্তু এ দিন আগের রাত থেকেই সেনা-পুলিশ ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা কবরস্থান ঘিরে রাখেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এর আগে ১৫ অগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিবসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া মানুষদের বেপরোয়া মারধর করা হয়েছিল। ফলে এ দিন প্রায় কেউই বনানী কবরস্থানের দিকে যাননি।
শনিবারই চট্টগ্রামে তৌহিদি-জনতার নামে হুমকি দিয়ে অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীকে একটি দোকানের উদ্বোধন করতে দেওয়া হয়নি। মেহজাবিন কোটা আন্দোলনকারীদের প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছিলেন, ফেসবুকে গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে পোস্ট লিখেছিলেন। তার পরেও বলা হয়েছে, ‘আগের আমলের সুবিধাভোগী’ ছিলেন তিনি। অভিনেত্রী ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলেও গিয়েছিলেন। কিন্তু হুমকি দেওয়া হয়, মেহজাবিন শোরুমটির উদ্বোধন করলে সেটিকে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। এই পরিস্থিতিতে ওই অভিনেত্রীকে দিয়ে আর শোরুমটির উদ্বোধন করানো হয়নি।
ঢাকার শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে শনিবার ‘দেশ নাটক’ সংস্থার ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকটি অভিনয়ের কথা ছিল। তার আগেই সেখানে ফেস্টুন লাগিয়ে দাবি জানানো হয়, ‘সংস্থার দলনেতা এহসানুল এজাজকে আমাদের হাতে তুলে দিন।’ এই নাট্যকর্মীর বিরুদ্ধে হামলাকারীদের অভিযোগ, তিনি ফেসবুক পোস্ট-এ মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর সরকারের সমালোচনা করেছেন। পোস্টে ইউনূস ও কয়েক জন উপদেষ্টার ছবির কোলাজের নীচে তিনি লিখেছিলেন, ‘এরা বাংলাদেশ-বিরোধী, এরা স্বাধীনতা-বিরোধী, রাজাকারদের রুখে দাঁড়ান’। বিক্ষোভকারীরা জানান, এজাজকে তাঁদের হাতে তুলে না দিলে তাঁরা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি জ্বালিয়ে দেবেন, নাটকও করতে দেবেন না। অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক শেষ পর্যন্ত নাটক বন্ধ করে নাট্যকর্মীদের অন্য দরজা দিয়ে বার করে দেন। নাট্যকর্মীরা জানাচ্ছেন, এ ভাবে মাঝপথে নাটক বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা আগে ঘটেনি। রবিবার সন্ধ্যায় ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেছেন, নাটক বন্ধ করার ঘটনাকে অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থন করে না। কিন্তু পুলিশ বা সেনারা কেন পরিস্থিতি মোকাবিলায় গেল না, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি।