আর্থিক বিপর্যয়ের কারণে শ্রীলঙ্কায় বিপর্যস্ত বিদ্যুূৎ সরবরাহ। ছবি: সংগৃহীত।
জানুয়ারির গোড়ায় ২৫ শতাংশ ছুঁয়ে রেকর্ড গড়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্বে তলানিতে ঠেকেছিল বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। সে সময়ই অর্থনীতিবিদের একাংশ শ্রীলঙ্কায় আর্থিক বিপর্যয়ের ভবিষ্যবাণী করেছিলেন। মাস ঘোরার আগেই সেই পূর্বাভাস মিলে গিয়েছে।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভের পরে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রের এই অর্থনীতি কখনও এমন খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়নি। দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের গৃহযুদ্ধের সময় অত্যাধিক সামরিক খাতে ব্যয় শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছিল। করোনা পরিস্থিতিতে পর্যটন শিল্প প্রায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে বিদেশ থেকে আসা আয়ে।
অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে, দু’টি জাহাজে করে বাইরে থেকে তেল এলেও, ডলারের অভাবে তা হাতে নেওয়া যাচ্ছে না বলে গত সপ্তাহে জানিয়েছিলেন সে দেশের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী উদয় গমনপিলা। বিদেশি মুদ্রা না থাকায় কাগজ এবং কালি আমদানি করতে পারছে না কলম্বো সরকার। ফলে দেশ জুড়ে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সব পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে!
পাশাপাশি, ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি তলানিতে ঠেকায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে তৈরি হয়ে অব্যবস্থা। গত কয়েকদিন ধরেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এই পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা সরকার ঘোষণা করেছে, বুধবার থেকে রাজধানী কলম্বো-সহ গোটা দেশে দিনে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ রাতের কলম্বোয় ভরসা এখন মোমবাতি।
এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বাড়ছে আমজনতার মধ্যেও। দেশ জুড়ে খাবার এবং অত্যাবশকীয় জিনিসপত্র মজুত করার প্রবণতা বাড়ায় তৈরি হয়েছে সঙ্কট। দোকান এবং পেট্রোল পাম্পগুলিতে পড়ছে দীর্ঘ লাইন। সরবরাহ বাড়ন্ত হওয়ায় ছোটখাটো অশান্তির ঘটনাও ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে পেট্রোল পাম্পগুলিতে নজরদারির জন্য সেনা নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
শ্রীলঙ্কা বর্তমানে বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত। ফলে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা ছাড়া রাজাপক্ষে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতির মোকাবিলা কার্যত অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিমস্টেক সম্মেলনে যোগ দিতে কলম্বো গিয়ে শ্রীলঙ্কাকে কম সুদে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা জানান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।