Journalists

খুনের আসামি ঢাকার অন্তত ১৫০ সাংবাদিক

বাংলাদেশের এই দুই প্রথম সারির সাংবাদিক-সম্পাদক এখন খুনের মামলার আসামি। দু’টি মৃত্যুর ঘটনার দু’টি পৃথক মামলায় পুলিশ বহু অভিযুক্তের সঙ্গে শ্যামল দত্ত এবং মোজাম্মেল বাবুর নামও ঢুকিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৫২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’-এর সম্পাদক। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বৈধ ভিসা নিয়ে তিনি সপরিবার ভিন্‌ দেশে যেতে আখাউড়ার চেকপোস্টে উপস্থিত হলেও আটকে দেওয়া হয়েছিল শ্যামল দত্তকে। এর পরে শ্যামল ঢাকা থেকে বিমানে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। বিমানবন্দরেও তাঁকে আটকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আজ ভোরে এই শ্যামল দত্ত এবং বাংলাদেশের এডিটর্স গিল্ড-এর সভাপতি মোজাম্মেল বাবুকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাবুও বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী চ্যানেল ‘একাত্তর টেলিভিশন’-এর সম্পাদক। পুলিশের দাবি, তাঁরা অবৈধ ভাবে দেশ ছাড়ার উদ্দেশ্যে সীমান্তের দিকে যাওয়ার সময়ে স্থানীয় লোকেরা তাঁদের গাড়ি আটকে থানার হাতে তুলে দিয়েছে।

Advertisement

বাংলাদেশের এই দুই প্রথম সারির সাংবাদিক-সম্পাদক এখন খুনের মামলার আসামি। দু’টি মৃত্যুর ঘটনার দু’টি পৃথক মামলায় পুলিশ বহু অভিযুক্তের সঙ্গে শ্যামল দত্ত এবং মোজাম্মেল বাবুর নামও ঢুকিয়েছে। সেই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে এই দু’জনকে। ঠিক যেমন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নুর, যাঁকে গত কাল গভীর রাতে ঢাকার বেলি রোডে নিজের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর ঘটনায় এক ঝাঁক অভিযুক্তের সঙ্গে প্রবীণ এই শিল্পীর নামও জুড়েছে পুলিশ, যে মামলায় আজ আদালত তাঁকে ও সাবেক বিমানমন্ত্রী মাহবুব আলিকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে। অভিনেতা নুর ইউনূস সরকারের বিষদৃষ্টিতে পড়ার কারণ, ২০১৪ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে সংস্কৃতিমন্ত্রী করেছিলেন।

শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরেই মোজাম্মেল বাবুর ‘একাত্তর টিভি’-র দফতর ভেঙে চুরমার করে দেয় গণঅভ্যুত্থানের সশস্ত্র সমর্থকেরা। তার পরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর এক দল লোক এই চ্যানেলটি দখল করে দলীয় সাংবাদিকদের কাজে বসায়। একই ভাবে দখল করা হয়েছে ‘নিউজ ২৪’, ‘সময় টিভি’ এবং ‘মাই টিভি’। ‘কালের কণ্ঠ’ ও ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’-সহ ৫টি জাতীয় পত্রিকা এবং অন্তত ২৫টি আঞ্চলিক পত্রিকার দফতরও দখল করা হয়েছে। ঢাকার প্রায় ১৫৫ এবং চট্টগ্রামের ২৮ জন সাংবাদিককে খুন, গণহত্যা, মাদক চোরাচালান-সহ বিভিন্ন গুরুতর মামলার আসামির তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এডিটর্স গিল্ড-এর বিবৃতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটিতে অজস্র স্থানীয় সাংবাদিককে হেনস্থার উদ্দেশ্যে মামলা দিয়েছে ইউনূস সরকারের পুলিশ। নির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদককে তাড়িয়ে দিয়ে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাব দখল করেছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাংবাদিকেরা। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব দখলের জন্য তিন বার হামলা চালানো হয়। ব্যাপক ভাঙচুর করেও বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকেরা ক্লাবের দখল নিতে পারেনি। কিন্তু এই হামলায় অন্তত ২০ জন সাংবাদিক আহত হন। সেনা এসে আটকে পড়া ও জখম সাংবাদিকদের উদ্ধার করে। একই ভাবে নির্বাচিত কমিটিকে মেরে বার করে দিয়ে মফস্সলের অন্তত ১২টি প্রেস ক্লাব দখল করা হয়েছে।

Advertisement

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সম্প্রতি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য— সংবাদমাধ্যম স্বাধীন ভাবে কথা বলতে পারছে। তারা সরকারের যত খুশি সমালোচনা করতে পারছে।” ঢাকার এক দল সিনিয়র সাংবাদিক এখন পুলিশের দেওয়া মনগড়া মামলায় গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। “বাকিরা ইউনূসের কথা শুনে খুব হাসছেন, কিন্তু শব্দ না-করে। কারণ শব্দ বাইরে গেলেই খুনের মামলা জুটে যেতে পারে। মিথ্যা মামলায় হেনস্থা হওয়ার জন্য কে এই সরকারের সমালোচনা করতে যাবে?” ফোনে বললেন ঢাকার এক বিশিষ্ট সাংবাদিক, বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ থেকে সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যিনি বরাবর থেকেছেন সামনের সারিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement