—প্রতীকী চিত্র।
প্যালেস্টাইনে গণহত্যার অভিযোগে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)-এ মামলা করল দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, অবিলম্বে ইজ়রায়েলকে যুদ্ধ থামানোর নির্দেশ দেওয়া হোক।
কোর্টে দাখিল করা আবেদনপত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার তরফে জানানো হয়েছে— ‘‘ইজ়রায়েল যে অপরাধ করছে... সেটা জেনোসাইড বা গণহত্যা। ওরা গাজ়ায় প্যালেস্টাইনিদের ধ্বংস করে দিচ্ছে, দেশ হিসেবে, জাতিগত ভাবে।’’ ইজ়রায়েলের বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য এই অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বক্তব্য, হলোকস্টের পরে যে চুক্তি করা হয়েছিল, তা ভঙ্গ করেছে ইজ়রায়েল। আংশিক কিংবা কিছু ক্ষেত্রে সার্বিক ভাবে একটি মানবজাতিকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। আদালতকে অবিলম্বে পদক্ষেপের কথা বলা হলেও এখনও পর্যন্ত শুনানির দিন ধার্য হয়নি। আইসিজে রাষ্ট্রপুঞ্জের সর্বোচ্চ আদালত। দ্য হেগে অবস্থিত এই কোর্টের রায় অবশ্য আগে বহু বার উপেক্ষা করা হয়েছে। যেমন, ২০২২ সালের মার্চ মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিজে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দিয়েছিল মস্কোকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনও চলছে।
শুক্রবার সারা রাত দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনিসে ইজ়রায়েলি হামলা চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৬৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ২৫০ জন জখম হয়েছেন। বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধ থামানোর দাবি সত্ত্বেও জরুরি ভিত্তিতে ইজ়রায়েলকে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। তার পরেই শনিবার মধ্য গাজ়ায় নুসেরাত শরণার্থী শিবিরে। দু’টি শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমান। প্যালেস্টাইনি প্রশাসনের দাবি, প্রায়শই লোকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। তার পর বন্দি করে অত্যাচার চালাচ্ছে। ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানিয়েছেন, বাহিনী ক্রমশ হামাসের মূল ঘাঁটি ও অস্ত্রভান্ডারের দিকে এগোচ্ছে। গাজ়ার হামাস নেতা ইহা সিনওয়ারের বাড়ির নীচে একটি সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়েছে ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনী। সুড়ঙ্গ-কমপ্লেক্সটি ধ্বংস করেছে তারা।
যত দিন যাচ্ছে দুর্ভিক্ষ, মহামারির আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। যুদ্ধে কমপক্ষে ১৯ লক্ষ মানুষ ঘর হারিয়ে পথে। অন্তত ৫০ হাজার অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পুষ্টির অভাবে ভুগছেন। যথাযথ চিকিৎসাও হচ্ছে না তাঁদের। প্রবল ঠান্ডা, ক্ষুধা, পানীয় জলের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে ৯ লক্ষ শিশু। গাজ়ায় অন্তত ৫৩০০ রোগী সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছেন। তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান টেড্রস অ্যাডানম জানান, এ ভাবে চললে গাজ়ায় শীঘ্রই সংক্রামক রোগ ছড়াবে। শরণার্থী শিবিরগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে ৪ লক্ষের বেশি মানুষ স্বাস্থ্য-সঙ্কটে রয়েছেন।