অল্প লগ্নিও বদল আনে, নোবেল বক্ত‌ৃতায় বললেন অভিজিৎ

কুর্তা, নেহরু জ্যাকেট আর ট্রাউজার্সে রবিবার মঞ্চে উঠলেন তিনি, ২০১৯ সালের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার প্রাপকের ভাষণ দিতে।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

স্টকহলম শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:২১
Share:

মঞ্চে বক্ত‌ৃতায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি রয়টার্স।

যাঁরা প্রশ্ন করেছিলেন, আরসিটি কি আদৌ অর্থনীতি, সেই সব অর্থনীতিবিদের বিচক্ষণতাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানালেন এ বছরের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

কুর্তা, নেহরু জ্যাকেট আর ট্রাউজার্সে রবিবার মঞ্চে উঠলেন তিনি, ২০১৯ সালের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার প্রাপকের ভাষণ দিতে। জানালেন, আরসিটি (র‌্যান্ডমাইজ়ড কন্ট্রোলড ট্রায়াল) এসে পাল্টে দিয়েছে অর্থশাস্ত্রের চলন। শুধু বৌদ্ধিক চর্চার ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতির বিভিন্ন প্রকল্পও এখন তৈরি হচ্ছে আরসিটির ঘরানায়।

কী ভাবে কাজ করেন তাঁরা? অভিজিৎ জানালেন, তাঁরা একই পরীক্ষা অনেকগুলো জায়গায় করে দেখেন, যে ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে, সেটা কি সর্বত্রই সত্যি, নাকি দু’-একটা জায়গায় ঘটছে মাত্র?

Advertisement

তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে মানুষ জরুরি। কোন মানুষ? অভিজিৎ জানালেন, গবেষণায় তাঁরা দেখেছেন, যাঁরা বেশ পরচর্চা করেন, স্বভাবে আড্ডাবাজ, জরুরি খবর ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে তাঁরা ভারী কার্যকর। কর্নাটকে টিকাকরণ সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা গেল, সবাই যাঁকে ভরসাযোগ্য বলে চেনে, তাঁকে কাজে লাগালে যত শিশুর টিকাকরণ হচ্ছে, এক জন মিশুক লোককে কাজে লাগালে টিকাকরণের হার দাঁড়াচ্ছে তার দ্বিগুণ।

তাঁর এই ব্যাখ্যা শুনে শ্রোতারা যখন হেসে কুটোপাটি, অভিজিৎ তখনই আসল বোমাটা ফেললেন। “মূলধারার অর্থনীতি আমাদের এই অবধি আনতেই পারবে না। সেখানে আড্ডা, গল্পগুজব, গসিপের প্রসঙ্গই উঠবে না।’’ আরসিটি যে গবেষণার ক্ষেত্রে এক অসামান্য স্বাধীনতা দেয়, মনে করাতে ভুললেন না অভিজিৎ।

“আগে শুনতাম, বড় বড় ব্যাপারস্যাপার নিয়ে অর্থনীতির কাজ— ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাজার। আর আরসিটি করে খুচখাচ অদলবদলের কাজ।” কথাটা বলেই অভিজিৎ জানালেন, আরসিটির মাধ্যমে এখন ‘বড় সমস্যা’রও সমাধান হচ্ছে।

উন্নয়ন অর্থনীতির দুনিয়ায় কী ভাবে পৌঁছলেন তিনি, সেই প্রসঙ্গে অভিজিৎ বললেন, দারিদ্রের ফাঁদে কী ভাবে আটকে পড়ে মানুষ, সেই খোঁজেই তাঁর এই গবেষণায় আসা। বাবা গরিব ছিলেন বলেই ছেলেও গরিব, এই অবস্থারই নাম দারিদ্রের ফাঁদ। সেই ফাঁদ কেটে মানুষ মুক্তি পেতে পারে কী ভাবে, অভিজিতের গবেষণার পাখির চোখ সেটাই।

গরিবের হাতে টাকা দিলে তাঁরা আরও অলস হয়ে পড়েন? এই বিশ্বাসকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন অভিজিৎ। বললেন, “খুব সামান্য টাকার লগ্নিও মানুষের জীবনকে আমূল পাল্টে দিতে পারে। আমরা গরিব মানুষকে অল্প টাকা দিয়েছিলাম। তাঁরা সেটা থেকে অনেক অর্জন করতে পেরেছেন।” গরিব মানুষকে এক বার এগিয়ে দিতে পারলে তাঁদের বেশির ভাগই যে নিজেদের লড়াই লড়ে যেতে পারেন, অভিজিৎ এই বিশ্বাসে অটল।

শুধুই কি টাকা? আফ্রিকার ঘানায় গবেষণার অভিজ্ঞতা শ্রোতাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তিনি। সেখানে এক দল লোককে শুধু টাকা দিয়েছিলেন তাঁরা। অন্য দলকে সমান পরিমাণই টাকা দিয়েছিলেন, কিন্তু সঙ্গে খানিক উৎসাহও দিয়েছিলেন। কারও ক্ষেত্রে ধার শোধ করার জন্য একটু বেশি সময়, কারও ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ। দেখা গেল, যাঁরা টাকার সঙ্গে উৎসাহও পেয়েছিলেন, তাঁরা অনেক দ্রুত উন্নতি করলেন। “দারিদ্রের একটা মস্ত বিপদ হল, তা গরিবকে মানসিক ভাবে পঙ্গু করে দেয়। সেই অবস্থায় তাঁদের ওপর চাপ দিলে উৎপাদনশীলতা আরও কমে।” বললেন এমআইটি’র অধ্যাপক।

মঞ্চ থেকে নামার আগে অভিজিৎ জানিয়ে গেলেন, আরসিটি-কে যদি অর্থনীতি হিসেবে গণ্য করা না হয়, তবে সেটা করা উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement