HIna Khan's Struggle with Cancer

‘সব মেয়ে যেন আমার প্রেমিকের মতো প্রেমিক পান’! অন্য রকম প্রেমের গল্প শোনালেন হিনা খান

রকির সঙ্গে হিনার প্রেম কোভিডকালে লকডাউনের সময় থেকে। হিনা জানিয়েছেন, কোভিডের সময়ে যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তিনটে মাস্ক পরে তাঁর সেবা করতে তাঁর বাড়িতে চলে এসেছিলেন রকি। হিনার কথায়, ‘‘সেই যুদ্ধটা একরকম ছিল। এই যুদ্ধটা আরও কঠিন।’’

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫৫
Share:

হিনা খান (বাঁ দিকে) এবং তাঁর প্রেমিক রকি জয়সওয়াল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

বেশি ভাল জিনিসে নাকি নজর লেগে যায়! এমন কথা আকছার শোনা যায় আশেপাশে। হিনা রব্বানি খান অবশ্য তাঁর জীবনের ‘অমূল্য রতন’ নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন না। উল্টে বললেন, তাঁর মতো ভাগ্য যেন সব মেয়ের হয়! স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হিনা এখনও ক্যানসারের চিকিৎসাধীন। তবু তার মধ্যেই ধীরে ধীরে চেষ্টা করছেন জীবনের স্রোতে ফেরার। একটা সময় ঘরের চার দেওয়াল আর হাসপাতালের বন্দিদশা পেরিয়ে এখন আবার টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যাচ্ছে তাঁকে। আর এই যে প্রত্যাবর্তন, ক্যানসারের মতো রোগের সঙ্গে যুঝে জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া— এই সবটুকুর জন্য হিনা কৃতিত্ব দিয়েছেন তাঁর প্রেমিক রকি জয়সওয়ালকে। হিনা বলেছেন, ‘‘এমন একটি মানুষকে পাশে পাওয়ার জন্য আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই। ও ছিল বলে আমার কঠিন লড়াইটা লড়তে পেরেছি। আমি চাইব আমার প্রেমিকের মতো প্রেমিক যেন এই বিশ্বের প্রতিটা মেয়ে পান।’’

Advertisement

রকির সঙ্গে হিনার প্রেম কোভিডকালে লকডাউনের সময় থেকে। হিনা জানিয়েছেন, কোভিডের সময়ে যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তিনটে মাস্ক পরে তাঁর সেবা করতে তাঁর বাড়িতে চলে এসেছিলেন রকি। হিনার কথায়, ‘‘সেই যুদ্ধটা একরকম ছিল। এই যুদ্ধটা আরও কঠিন। প্রথম দুঃসংবাদটা পাওয়ার পর থেকে চিকিৎসার প্রতিটি পর্যায়ে এবং বাড়িতে সর্ব ক্ষণ ও আমার সঙ্গে থেকেছে। আমার খেয়াল রেখেছে। এমনকি, আমায় যখন মাথার চুল কামিয়ে ফেলতে হল, তখন রকিও নিজের চুল কামিয়ে ফেলেছে। এবং তত দিন পর্যন্ত নিজের চুল বাড়তে দেয়নি, যত দিন না আমার মাথায় চুল আবার নতুন করে গজাতে শুরু করেছে।’’

‘‘আমায় যখন মাথার চুল কামিয়ে ফেলতে হল, তখন রকিও নিজের চুল কামিয়ে ফেলেছিল।’’ বলছেন হিনা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

ক্যানসারের যুদ্ধ কতটা ভয়াবহ, তা যাঁরা লড়েছেন, শুধু তাঁরাই জানেন। অস্ত্রোপচার হওয়ার পরে চিকিৎসা পর্বে ঝিমিয়ে পড়েন রোগীরা। কেমোথেরাপি এবং অন্য চিকিৎসা পদ্ধতির নানারকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। রোগীরা কেউ খেতে পারেন না, কারও শরীর জুড়ে ব্যথা, জ্বালা শুরু হয়। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়ে যায়। হাত-পায়ের রংও বদলে যায় অনেকের। এমনকি, চোখের পাতা, ভুরুর রোমও অবশিষ্ট থাকে না। এই সব কিছু একা এক জন রোগীর পক্ষে সামলানো কষ্টকর। শারীরিক জ্বালা-যন্ত্রণার সমস্যা তো থাকেই। এক জন নারীর স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পরে মানসিক যন্ত্রণাও থাকে। হিনা জানিয়েছেন, তিনি নিজের শরীরের অস্ত্রোপচারের দাগ দেখে কষ্ট পেতেন। দেখতে চাইতেন না। কিন্তু রকি খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেন, ‘‘আজ কেমন আছে? দেখি কী অবস্থা?’’ হিনা বলছেন, ‘‘দেখার পরে ও-ও যে কষ্ট পেত, তা বুঝতে পারতাম। কিন্তু আমার সামনে কাঁদত না। স্নানঘরে চলে গিয়ে কাঁদত। কিন্তু তার পরে ও-ই আমাকে বোঝাত। ও সেই মানুষ যে ওই দাগগুলোর যন্ত্রণা ভুলিয়েছে আমায়।’’

Advertisement

হিনার পাশে তাঁর প্রেমিকের এ ভাবে পাশে থাকা এক জন রোগীর সেরে ওঠার জন্য কতটা জরুরি, তা বিশ্লেষণ করেছেন মনরোগ চিকিৎসক সন্তোষ বঙ্গার। তিনি বলছেন, ‘‘রোগী যখন শারীরিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যান, তখন তাঁর সেরে ওঠার অনেকটা নির্ভর করে, মনের উপরেও। তাঁরাও সেই সময় চান, পাশে কেউ থাকুক। তাঁদের মানসিক এবং শারীরিক কষ্ট বুঝুক। চিকিৎসা বা বিজ্ঞান শারীরিক কষ্ট মেটানোর চেষ্টা তো করবেই। কিন্তু ওই বাড়তি মনযোগ টুকু অনেক বড় ওষুধের কাজ করে।’’

তবে একই সঙ্গে চিকিৎসক বঙ্গার বলছেন, ‘‘যাঁরা এই ধরনের রোগীদের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠার দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের কিন্তু নিজেদেরও ভাল থাকার খেয়াল রাখতে হবে। প্রিয়জনের যত্ন নিতে গিয়ে নিজের প্রতি অবহেলা করলে, দু’জনেরই ক্ষতি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement