ফিনল্যান্ডের কাইনু প্রদেশের একটি পৌর এলাকা সুয়োমুসালমি। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার লোকের বাস এখানে। সুয়োমুসালমির একটি ব্যাপার অত্যন্ত রহস্যজনক।
এই এলাকার ৫ নম্বর হাইওয়ের ধারে এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে আজীবন দাঁড়িয়ে থাকে শয়ে শয়ে ‘নির্বাক মানুষ’! যাঁদের আপাদমস্তক রঙিন কাপড়ে মোড়া। মুখটাও ঠিক দেখা যায় না। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তারা!
কাঠের পুতুলের মতো রাস্তার দিকে তাকিয়ে কিসের অপেক্ষায় যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা! দিনরাতের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। সূর্য ডোবার পর ওই রাস্তায় যেতে গিয়ে অনেকেই শয়ে শয়ে এই ‘মানুষ’ দেখে ভয় পেয়ে যেতে পারেন। কারা এরা?
মানুষরূপী এই মূর্তিগুলো আসলে মানুষ নয়। কাকতাড়ুয়া। একটি কাঠের লাঠির উপর খড় জড়িয়ে মানুষের অবয়ব করা হয়েছে। এবং তার উপর রঙিন জামা পরিয়ে হয়ে উঠেছে আস্ত ‘মানুষ’।
কোনও কাকতাড়ুয়ারই মুখ নেই। দূর থেকে যাতে বোঝা না যায় তাই মাথাটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া। এ রকম শয়ে শয়ে কাকতাড়ুয়া রাস্তার দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু কেন?
এদের কেন এবং কে এখানে রেখে দিয়ে গিয়েছেন, তার সঠিক উত্তর সকলেরই অজানা। তবে বছরে দু’বার করে তাদের পোশাক বদলানো হয়।
এই ‘নির্বাক মানুষ’ নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত রয়েছে। অনেকের মতে, এরা নাকি আগে অন্য জায়গায় ছিল। মাঠে সাধারণ কাকতাড়ুয়ার মতোই কাঠামোগুলি রাখা ছিল।
কিন্তু পরবর্তীকালে সেগুলিকে এই স্থানে নিয়ে আসা হয়। নিয়ে আসার কারণ নিয়েও ভিন্ন মত রয়েছে।
কারও মতে, আগে কাঠামোগুলি রাখা ছিল হেলসিঙ্কি শহরের কাছে লাসিলা নামে এলাকায়। তারপর নাকি সেগুলি নিয়ে যাওয়া হয় হেলসিঙ্কি সেনেট স্কোয়ারে।
১৯৯৪ সাল নাগাদ এই কাকতাড়ুয়াগুলিকে নিয়ে আসা হয় ৫ নম্বর হাইওয়ের ধারে। কিন্তু কে বা কারা এবং কেন সেগুলিকে অন্যত্র নিয়ে গেলেন, তা জানা নেই।
রাস্তার ধারে ‘নির্বাক মানুষ’গুলির উপস্থিতি আজও রহস্যই রয়ে গিয়েছে। অনেকের মতে আবার ইচ্ছাকৃত ভাবেই শিল্পী বিষয়টিকে রহস্যেই রাখতে চেয়েছেন।
শিল্পী নাকি চান দর্শকই এর জন্য আলাদা আলাদা যুক্তি খুঁজে নিন। পথচলতি অনেক মানুষের মতে যেমন ‘নির্বাক মানুষ’গুলির মুখে কষ্টের ছায়া রয়েছে। অতীতে ঘটে যাওয়া কোনও খারাপ স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলেছে তারা।
কারও মতে আবার, যুদ্ধে শহিদদের স্মরণেই দাঁড়িয়ে রয়েছে এই ‘নির্বাক মানুষ’গুলি।
১৯৩৯ থেকে ১৯৪০ সাল নাগাদ ফিনল্যান্ড এবং সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়ে ছিল। সেই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন অনেক সৈনিক।
আজও রাস্তার দিকে চেয়ে সেই সমস্ত শহিদদের প্রতীক হয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা।