শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।
‘আজকের অবরুদ্ধ বাংলাদেশ কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পরিণত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার বাংলাদেশে ‘জেলহত্যা দিবস’। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করার পরে জাতীয় নেতাদের কারাবন্দি করা হয়। নভেম্বরের ৩ তারিখ গভীর রাতে মুক্তিযুদ্ধের চার জন প্রধান নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলি এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি প্রকোষ্ঠে নিয়ে এসে বাইরে থেকে এলোপাথাড়ি গুলি করে হত্যা করা হয়। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে শেখ হাসিনা বিবৃতিতে বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধী চক্র এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলার মাটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল রাজনীতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।’ তাঁর মতে, কিন্তু তার পরেও সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। আরও এক বার তা হবে।
এ বছর ১৫ অগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদিনে তাঁর পুড়িয়ে দেওয়া ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বাড়ির সামনে কাউকে শোক প্রকাশ করতে দেয়নি সরকারপন্থীরা। মাইকে উচ্চৈঃস্বরে হিন্দি সিনেমার চটুল গান বাজিয়ে নাচগান করা হয়েছে। টহল দিয়েছে লাঠি হাতে তথাকথিত ‘ছাত্র-জনতা’। আওয়ামী লীগের যে সব নেতা-কর্মী শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন, বেধড়ক মারধর করা হয়েছে তাঁদের। যুব লীগের এক প্রাক্তন নেতা লাঠির ঘায়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে ক’দিন পরে মারা গিয়েছেন। হাসিনা তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজকের বাংলাদেশে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, শোক পালনের অধিকার নেই।’
গণঅভ্যুত্থানে ৫ অগস্ট দেশছাড়া হয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া হাসিনা লিখেছেন, ‘দেশে বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতা-বিরোধীরা ক্ষমতাসীন হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে বার বার হামলা করেছে। কিন্তু দিনের শেষে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি এবং ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।’ তাঁর কথায়, ‘সময়ের পরিক্রমায় এক দিন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের চেতনা চির জাগরূক থাকবে।’ মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেছেন যে, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন?’
‘ছাত্র-জনতার’ ক্ষোভের প্রকাশ, এই অজুহাত দিয়ে বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ ‘বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকে জাতীয় পার্টির দফতর ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে এ দিন পোড়া দফতরের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেই কর্মসূচি এ দিন হতে দেয়নি মুহাম্মদ ইউনূস সরকার। এই বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র নামধারীদের দাবি মেনে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছাত্র লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ-সহ ১১টি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে আদালতে আবেদনও করেছিলেন এদের নেতারা। তার পরে জাতীয় পার্টির সদর দফতরে যে ভাবে হামলা করে আগুন দেওয়া হয়েছে, তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে এই মুহূর্তে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি-র। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দিন বলেন, “আমরা চাই দেশে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক অন্তর্বর্তী সরকার। কোনও দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করাকে আমরা সমর্থনকরি না।”
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতির হাল নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে। বিদেশি মুদ্রার অভাবে কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র হয় উৎপাদন কমাচ্ছে অথবা ইউনিট বন্ধ করে দিচ্ছে। এর মধ্যেই বিপুল অর্থ বকেয়া থাকায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে ভারতের আদানি পাওয়ার সংস্থা। সুতরাং বাংলাদেশে আপাতত বড়সড় বিদ্যুৎ সঙ্কটের মুখে। বহু কারখানা বন্ধ থাকায় এখনও সে ভাবে এই সঙ্কট বোঝা যাচ্ছে না। তবে এ বার তা জনজীবনকে প্রভাবিত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।