গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কোটা সংস্কার নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে রবিবার সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট ‘ঐতিহাসিক’ রায় দেয়। হাই কোর্টের দেওয়া আগের রায়কে খারিজ করে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কার হবে। সেই রায়কে স্বাগত জানাল শেখ হাসিনার সরকার। তবে আন্দোলনকারীরা এই রায়কে স্বাগত জানালেও এখন আন্দোলন থেকে সরে আসার ভাবনা নেই বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। এমনই খবর সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি বাংলা’ সূত্রে।
জুন মাস থেকে বাংলাদেশে শুরু হওয়া সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন জুলাইয়ে এসে ভিন্ন মাত্রা নেয়। দলে দলে ছাত্র-ছাত্রীরা বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এখনও পর্যন্ত এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শতাধিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সরকার কঠোর হাতে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা অনড় ছিলেন তাঁদের দাবিতে। তার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে কোটা সংস্কার মামলার শুনানি ছিল।
২০১৮ সালে সংরক্ষণ নিয়ে হাসিনার সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা গত ৫ জুন অবৈধ ঘোষণা করেছিল হাই কোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সরকার। সেই মামলায় রবিবার সর্বোচ্চ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে সংরক্ষণ নিয়ে হাসিনার সরকারের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বহাল রাখেনি। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মোট সাত শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচ শতাংশ সংরক্ষণ থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। বাকি দুই শতাংশের মধ্যে ১ শতাংশ থাকবে অন্য অনগ্রসর শ্রেণির জন্য, বাকি ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের জন্য সংরক্ষিত। ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে।
সেই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ‘বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আনিসুর জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট অত্যন্ত বিচক্ষণ রায় দিয়েছে। সেই রায়ের ভিত্তিতে খুব শীঘ্রই সরকারি ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তবে এই রায়ের পরেও বিক্ষোভ থামার লক্ষণ নেই। ‘বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্দোলনের কয়েক জন সমন্বয়ক জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে। তাঁদের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন। তার পরও পুলিশ তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন অনেক ছাত্র। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত হিংসায় ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ছাত্রদের জন্য যত দিন না বিচার পাওয়া যায়, তত দিন আন্দোলন চলবে বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের একাংশের।