বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবারই রাজ্যসভায় তৃণমূল কংগ্রেস দাবি তুলেছিল, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে হবে। তবে চলতি অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর মুখ খোলার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আজ লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুরবস্থা নিয়ে সরব হলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশ সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিষয়টি এখনও উদ্বেগে রেখেছে। সেই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টির মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি, অন্য প্রশ্নের উত্তরে প্রতিবেশী কূটনীতি নিয়েও ভারতের বর্তমান অবস্থার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। অন্য দিকে, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, বিদেশ সচিবের সফরের পর ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
শুক্রবার লোকসভায় বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন এমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। জানতে চান, বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে এক হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাঁদের ধর্মস্থানগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কী কী পদক্ষেপ করছে? উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের ভাবাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। কয়েক দিন আগে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন। আলোচনায় বিষয়টি উঠেছিল। আমরা আশা করেছি, বাংলাদেশ নিজের স্বার্থেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে।” পাশাপাশি তাঁর কথায়, “বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতে ভারতের যোগদানের ফল ভাল। প্রতিবেশী প্রথম নীতির কথা উঠলে বলতে হয়, চিন এবং পাকিস্তানকে বাদ দিলে বাংলাদেশ-সহ প্রায় প্রতিটি প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক অংশীদারি রয়েছে।”
অন্য দিকে, আজ বিকেলে তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের একই উদ্বেগ তুলে ধরেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জয়সওয়াল। তাঁর কথায়, “বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী বাংলাদেশ গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা-সহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছি। বিদেশসচিব তাঁর বৈঠকে গণতান্ত্রিক, সুস্থির, শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থনের কথা তুলে ধরেছেন।” জয়সওয়াল বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থা নির্ভর সম্পর্কের কথা। তাঁর বক্তব্য, “নয়াদিল্লি চায় পারস্পরিক আস্থা, সম্মান এবং সংবেদনশীলতা বজায় রাখা একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও কল্যাণ-সহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলী নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথাও ঢাকাকে জানানো হয়েছে।” মুখপাত্রের কথায়, “বিদেশসচিবের সফর দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও টেঁকসই করবে বলেই আশা করি, যেখানে উদ্বেগ নিরসনের বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি থাকবে। সেই সঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশের
মধ্যে সারবস্তুগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”
সংসদে বাংলাদেশের পাশাপাশি উত্তপ্ত প্রতিবেশী বলয় নিয়ে প্রশ্ন করেন কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারি। জবাবে বিদেশমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী নেপালে যাওয়ার আগে ১৪ বছর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সে দেশে যাননি। শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর আগে ৩০ বছর কোনও প্রধানমন্ত্রী যাননি। এতেই প্রমাণ হচ্ছে মোদী সরকার প্রতিবেশী প্রশ্নে কতটা দায়বদ্ধ। লোকসভায় নবীন জিন্দলের করা পাকিস্তান সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, “অন্য সব প্রতিবেশী দেশের মতোই আমরা চাই পাকিস্তানের সঙ্গেও সুসম্পর্ক। তবে সেই সম্পর্ক হোক সন্ত্রাসমুক্ত। এটাই আমাদের সরকারের অবস্থান।”
আজ কৈরানা লোকসভা কেন্দ্রের এসপি সাংসদ ইকরা চৌধরি বাংলাদেশ এবং ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একই বন্ধনীতে। তাঁর কথায়, “ভারত হোক অথবা বাংলাদেশ। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতেই হবে।”