সিরিয়া নিয়ে ফের মুখোমুখি আমেরিকা আর রাশিয়া।
কাল ভোর রাতে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস আর তার আশপাশের এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী জোট বাহিনী। ওয়াশিংটনের দাবি, বেছে বেছে আসাদ সরকারের রাসায়নিক অস্ত্রের কেন্দ্রগুলিতেই হামলা চালানো হয়েছে। আর তাতে বেজায় ক্ষেপেছে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের বন্ধু দেশ রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিষয়টিকে সামরিক আগ্রাসন বলে আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, এই হামলা সিরিয়ার মানবিক সঙ্কট বাড়াবে বই কমাবে না।
গত সপ্তাহে সিরিয়ার দুমা শহরে রাসায়নিক হামলায় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৮০ জনের। অভিযোগ, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীই এই হামলার নেপথ্যে ছিল। তার পর থেকেই সিরিয়ার বিরুদ্ধে আকাশপথে হামলার চালানোর কথা বলে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাল রাতে ঠিক সেটাই করে দেখায় তাঁর বাহিনী। এর আগে রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকার দূত নিকি হ্যালিও সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে মস্কোকে এক হাত নিয়েছিলেন। রুশ সংবাদমাধ্যম তখন জানিয়েছিল, সিরিয়া নিয়ে আমেরিকা আর রাশিয়ার মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও লেগে যেতে পারে। আজ অবশ্য পুতিন কড়া ভাষায় আমেরিকা আর পশ্চিমী দেশগুলির আগ্রাসনের নিন্দা করলেও সরাসরি আমেরিকার সঙ্গে সংঘাতের কথা বলেননি।
কিন্তু আমেরিকায় তাঁর প্রতিনিধি বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট কড়া বার্তাই দিয়েছেন। কালকের হামলার পর পরই আমেরিকায় নিযুক্ত রাশিয়ার দূত আনাতলি আন্তোনভ একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘‘আরও এক বার আমাদের ভয় দেখানো হল। আমরা সতর্ক করছি, এই হামলার ফল ভয়ঙ্কর হবে। তার দায় সম্পূর্ণ ভাবে পড়বে ওয়াশিংটন, লন্ডন আর প্যারিসের উপরে।’’ তবে একই সঙ্গে রাশিয়ার দাবি, সিরিয়ায় তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলি এই হামলায় অক্ষত রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় মার্কিন ‘আগ্রাসন’ নিয়ে সরব রুশ প্রেসিডেন্ট
পুতিন অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা খুব শীঘ্রই এ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে একটি বৈঠক ডাকার দাবি জানাবেন। তাঁর আরও দাবি, দুমা শহরে আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক হামলার যে অভিযোগ আমেরিকা এনেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। রুশ বিশেষজ্ঞ বাহিনী গিয়ে ওই এলাকায় কোনও রাসায়নিক অস্ত্রের অস্তিত্ব পায়নি।
মার্কিন বাহিনীর হামলা নিয়ে মুখ খুলেছে আসাদ সরকারও। সিরিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, মার্কিন-ব্রিটিশ-ফরাসি বাহিনীর এই সম্মিলিত হামলার কড়া নিন্দা করে সিরিয়ার সরকার। সিরিয়ায় এখন তদন্ত শুরু করতে চলেছে ‘অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল ওয়েপনস’ (ওপিসিডব্লিইউ)। সিরিয়া সরকারের অভিযোগ, সেই তদন্ত বানচাল করতেই ঠিক এই সময়ে পরিকল্পনা করে এই হামলা চালিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন হামলার নিন্দা করেছে ইরান সরকারও। তাদের নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের বক্তব্য, ‘‘সিরিয়ার বিরুদ্ধে এই হামলা আসলে অপরাধ।’’