বুচা শহরে রুশ হানায় নিহত শহরবাসীর দেহ মর্গে নিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। সোমবার। ছবি: রয়টার্স
ইউক্রেনের বুচা শহরে রুশ সেনার তাণ্ডব নিয়ে আজও উত্তাল গোটা বিশ্ব। রবিবার বুচার খবর ছড়াতেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, আমেরিকার পাশাপাশি নেটোও বলে, ‘‘এ নৃশংসতা মেনে নেওয়া যায় না।’’ গত কাল সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল রাশিয়া। আজও ক্রেমলিন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘আমরা জোরের সঙ্গে সব অভিযোগ অস্বীকার করছি। ওই সব ছবি, ভিডিয়ো ভুয়ো।’’
আজ অবশ্য বুচার আরও ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। উঠেছে আরও নারকীয় অভিযোগ। একাধিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বুচার ঘটনা সত্য। ইউক্রেনীয় পার্লামেন্টের সদস্য লেসিয়া ভেসিলেন আজ টুইট করেন একটি ছবি। তাতে দেখা যাচ্ছে, মৃতার গায়ে পোড়া স্বস্তিক চিহ্ন। তিনি লিখেছেন, ‘রুশ সেনারা লুট-রাহাজানি করেছে, খুন করেছে। ১০ বছরের বালিকার গোপন অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। মহিলার গায়ে স্বস্তিক চিহ্নের পোড়া দাগ। রাশিয়া, রাশিয়ার পুরুষেরা এ কাজ করেছে। এবং রাশিয়ার মায়েরা এমন সন্তানদের বড় করেছে। অপরাধীদের দেশ।’’
যুদ্ধ মানেই ধর্ষণ। ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে শতকের পর শতক। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। আগেও এ অভিযোগ উঠেছিল, রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনীয় মহিলাদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। অপহরণ করছে। কিন্তু এ বারে অভিযোগ উঠল, তাদের লালসার হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না শিশুরাও। টুইটারে লেসিয়া আরও লিখেছেন, ‘ধর্ষণ করে খুন করার আগে ভয়াবহ অত্যাচার করা হয়েছে। আমি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। রাগ, ঘৃণা, ভয়ে মাথা কাজ করছে না। গণহত্যা বন্ধ হোক। পুতিন এ বার থামুন।’’
রাশিয়া এর দায় নিতে না-চাইলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিষয়টি নিয়ে জরুরী বৈঠকে বসেছে বলে জানা গিয়েছে। তবে তাতে কতটা কী হবে, তা জানা নেই। প্রাথমিক ভাবে শোনা যাচ্ছে, রাশিয়ার উপরে আরও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর কথা ভাবছে তারা। ইইউ-এর প্রধান বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞ জোসেফ বোরেল বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ সহমর্মিতার সঙ্গে আমরা ইউক্রেন ও ইউক্রেনের মানুষের পাশে আছি। বুচা ও অন্য শহরগুলিতে যে ধরনের নৃশংস অত্যাচার চালাচ্ছে রুশ বাহিনী, তা ইউরোপের মাটিতে হচ্ছে। যত ভাবে এর নিন্দা করা যায়, আমরা তা-ই করছি।’’
অবিলম্বে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। রাজধানী কিভের কাছেই বুচা শহর। বুচা, ইরপিন হয়ে কিভের দিকে এগোচ্ছিল দীর্ঘ রুশ কনভয়। বেশ কিছু দিন এই দুই শহর দখল করেছিল তারা। ৩০ মার্চ নাগাদ শহর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রুশ বাহিনী এই হত্যাকাণ্ড চালায় বলে অভিযোগ। আজ বুচা শহরে গিয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। নিজে চোখে দেখে এসেছেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা দেহের সারি। তাঁর দাবি, নিহতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়াতে পারে। সন্দেহ করছেন, বহু মানুষকে গণকবর দিয়ে গিয়েছে রুশরা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আজ বলেন, ‘‘ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলেছিলাম বলে আমি সমালোচনার শিকার হই। দেখুন ওরা কী করেছে বুচায়।’’
কিন্তু পুতিন ও তাঁর রাশিয়ার নিন্দা করলেও ইউরোপের দেশগুলি বা আমেরিকা, কেউই এ পর্যন্ত সরাসরি বিবাদে জড়ায়নি। ইউক্রেনকে অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রয়োজনীয় অস্ত্র তারা দেয়নি। এ পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিমানও সাহায্য হিসেবে পায়নি কিভ। একমাত্র পোল্যান্ড যুদ্ধবিমান পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাতে বাধা দেয় নেটো-ই। ইউরোপের একাধিক দেশের নেতা কিভে এসে ঘুরে গিয়েছেন। ইউক্রেনের অন্যতম প্রশাসনিক প্রধান ইরিনা ভেনেডিকটোভা বলেন, ‘‘কিভ কোনও রাজনৈতিক পর্যটন কেন্দ্র নয়। অপরাধের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। দেখুন...।’’