এ বার অধিকৃ ইউক্রেনে গণভোটের আয়োজন পুতিন সরকারের। ফাইল চিত্র।
যুদ্ধ পরিস্থিতির পালাবদলের মধ্যেই ইউক্রেনের চার অধিকৃত অঞ্চলে গণভোটের ঘোষণা করল রাশিয়া। ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের (যাদের একত্রে ডনবাস বলা হয়) পাশাপাশি খেরসন এবং জাপোরিজায়া রয়েছে এই তালিকায়।
ওই চার অঞ্চল ইউক্রেনের মোট এলাকার ১৫ শতাংশ। শুক্রবার থেকেই শুরু হয়েছে ওই চার অঞ্চলে গণভোটের প্রক্রিয়া। ফেব্রুয়ারি মাসে যুদ্ধের গোড়াতেই ওই চারটি এলাকার দখল নিয়েছিল ভ্লাদিমির পুতিনের সেনা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন ফৌজ ওই প্রদেশগুলির বেশ কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুগত বাহিনীর প্রত্যাঘাতে গত এক মাসে মোড় ঘুরে গিয়েছে যুদ্ধের। দক্ষিণের খেরসন থেকে উত্তর-পশ্চিমের খারকিভ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় হামলাকারী রুশ ফৌজ এখন আত্মরক্ষার জন্য পিছু হটতে ব্যস্ত। পুতিনের ডাকে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে ভয়ে দেশ ছাড়তে শুরু করেছেন রুশ যুবকদের একাংশ। জোর করে যুদ্ধে পাঠানো হতে পারে আশঙ্কাতেই, তাঁদের এই দেশ ছাড়ার হিড়িক। এই পরিস্থিতিতে মস্কোর গণভোটের ঘোষণা ইউক্রেনকে ভেঙে একাংশ দখলের রাখার মরিয়া প্রচেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সেনা অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন পুতিন। তার আগে রুশ সীমান্ত লাগোয়া পূর্ব-ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। ওই দুই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ রুশ। মস্কো-পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলিও কয়েক বছর ধরে সেখানে সক্রিয়। কিন্তু সাত মাসের যুদ্ধেও সেখানে নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি রুশ ফৌজ।
জাপোরিজিয়ায় গণভোটের ঘোষণার পিছনে মস্কোর ‘অন্য পরিকল্পনা’ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গণভোটের মাধ্যমে জাপোরিজিয়াকে ‘স্বশাসিত’ ঘোষণা করে সেখানকার পরমাণুকেন্দ্রটি দখলে রাখাই পুতিনের ‘ছক’ বলে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশ মনে করছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের থেকে কৃষ্ণসাগর লাগোয় ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ ছিনিয়ে নেওয়ার পর ওই অঞ্চলকেও ‘স্বশাসিত’ ঘোষণা করেছিলেন পুতিন।
এরই মধ্যে পুতিন-ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়েছেন। রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান মেদভেদেভ পশ্চিম এশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ইউক্রেন যুদ্ধে আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজন কৌশলগত ভাবে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের পথও খোলা রাখা হচ্ছে।’’