রাশিয়া ছাড়ার হিড়িকে ফিনল্যাণ্ড সীমান্তে গাড়ির সারি। ছবি রয়টার্স।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার জনসাধারণের একাংশকে যুদ্ধে পাঠানোর কথা গত কালই ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর তার পর থেকেই দেশ ছাড়ার ধুম পড়েছে রাশিয়া জুড়ে।
উড়ানের টিকিট কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত একটি রুশ সংস্থার দাবি, বিদেশে যাওয়ার এক পিঠের উড়ানের টিকিটের চাহিদা আকাশছোঁয়া। ইউরোপের অধিকাংশ দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার বিমান চলাচল এখন বন্ধ। ফলে গত কাল প্রতিবেশী আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্থানে যাওয়ার সমস্ত টিকিটই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, এই হিড়িক রুখতে ১৮ থেকে ৬৫ বছরের পুরুষদের দেশ ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করছে প্রশাসন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আগাম অনুমতি ছাড়া যাতে তাঁরা কেউ দেশের বাইরে যেতে না পারেন— এমনই ব্যবস্থা করতে চলেছে পুতিন সরকার। দেশবাসীর একাংশের আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে রাশিয়ায় সামরিক শাসন জারি হতে পারে। পাশাপাশি, দেশ জুড়ে নতুন শক্তিতে যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ ঘোষণার সাত মাস পরে কাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছেন, দেশের সংরক্ষিত বাহিনীতে নাম থাকা এবং সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত কিন্তু শারীরিক ভাবে সক্ষম ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের ফের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এর পরেই জানিয়ে দেন, সেই সংখ্যাটা অন্তত ৩০ লক্ষ। যুদ্ধ শুরুর গোড়া থেকেই সাধারণ রুশদের একাংশ যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। মাঝে-মধ্যেই বিভিন্ন শহরে তা নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। তবে প্রশাসনের আগাম অনুমতি ছাড়া কোনও রকম বিক্ষোভ সমাবেশ এ দেশে বেআইনি। ফলে সেই সমস্ত বিক্ষোভের বেশির ভাগই শক্ত হাতে দমন করা হয়েছে। নয়তো বিশ্বের নজর থেকে আড়াল করেছে প্রশাসন। গত কাল পুতিনের ঘোষণার পরে তলে তলে জমে ওঠা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন যুদ্ধ বিরোধী মানুষেরা। অন্তত ৩৮টি শহরে কাল থেকে তেরশোর বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রাজধানী মস্কোয় ৫০২ জন, সেন্ট পিটাসবার্গে ৫২৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভের ডাক দেওয়া এক বিরোধী দলের কথায়, ‘‘যুদ্ধের নিধন যন্ত্রে হাজার হাজার রুশ পুরুষকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। ওঁরা আমাদের বাবা, স্বামী, ভাই। ওরা কেন মরবে? কেন মায়েরা, শিশুরা চোখের জল ফেলবে?’’ তবে এই বিক্ষোভ আন্দোলনকে কোনও ভাবে প্রশ্রয় দিতে নারাজ সরকার। মস্কো প্রশাসন জানিয়েছে, এই ধরনের বিক্ষোভে অংশ নিলে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
সংবাদ মাধ্যমের একাংশের দাবি, দেশের বিভিন্ন জেলে থাকা বন্দিদেরও যুদ্ধে নামাতে চায় সরকার। সাজাপ্রাপ্ত সেই সব অপরাধী ছ’মাস যুদ্ধক্ষেত্রে কাটালে তারা প্রেসিডেন্টের কাছে অপরাধ মাফের আবেদন জানাতে পারবে। তাদের প্রত্যেককে ১৪০০ পাউন্ড করে দেওয়া হবে। একটি সংবাদ মাধ্যমের দাবি, এই সমস্ত অপরাধীর মধ্যে ‘সিরিয়াল কিলার’, এমনকি এক নরমাংসভোজীও রয়েছে। অন্য দিকে, আজ প্রায় তিনশো যুদ্ধবন্দি বিনিময় করেছে ইউক্রেন-রাশিয়া।
রুশ সেনাবাহিনীতে সাধারণের একটা অংশকে নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়ায় আজ ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, “ভারত বরাবরই বলে এসেছে, অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করার জন্য পথ খোঁজা প্রয়োজন। আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমেই সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। সম্প্রতি সমরখন্দে এসসিও সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের এই অবস্থান ফের স্পষ্ট করেছেন রুশ প্রেসিডেন্টের কাছে। যে কোনও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে ভারত।”
যদিও আমেরিকা, ইউরোপের ধারাবাহিক চাপের কাছে নত না হয়ে রাশিয়া থেকে এখনও অশোধিত তেল আমদানি করে চলেছে মোদী সরকার। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, শক্তি ক্ষেত্রে জাতীয় চাহিদা এবং নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমদানি চলছে। মস্কো থেকে বাজারের তুলনায় কম দামে বিপুল তেল মজুত করছে ভারত। তবে কূটনৈতিক ভারসাম্য (আমেরিকা এবং রাশিয়া নীতিতে) বজায় রাখতে পুতিনের মুখের উপর যুদ্ধ বন্ধের কথাও বলেছেন মোদী। আজও সেনা নিয়োগ এবং যুদ্ধ বন্ধের প্রশ্নে সেই নীতিই বজায় রাখা হয়েছে।