ফাইল চিত্র।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি কোনও পক্ষ না নেওয়ায় ভারতের ভাবমূর্তি সুদৃঢ়ই হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রের। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরের পাশাপাশি ঘরোয়া রাজনীতিতেও সরব হবে বিজেপি সরকার। সামনেই কোনও নির্বাচন নেই ঠিকই। কিন্তু বিজেপি এবং আরএসএস মোদীর স্বাধীন বিদেশনীতি এবং আমেরিকার কাছে নতি স্বীকার না করার জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত একটি ভাষ্য, প্রচারের কথা ভাবছে বলেই সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ইউক্রেন-রাশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতটি সামনে নিয়ে আসা হবে।
রবিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নিয়ে সরব হয়েছেন। জানিয়েছেন, “ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বদলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে। এখন গোটা বিশ্ব কান খাড়া করে শোনে ভারত কী বলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে প্রত্যেকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারতের প্রতিপক্ষরাও প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে।” রাজনাথ এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের করা ভারতের রাশিয়া-নীতির প্রশংসার কথা উল্লেখ করেছেন।
এটা ঘটনা যে গত এক সপ্তাহে দিল্লি ছুটে এসেছেন আমেরিকা, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের কর্তারা। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি করেছে ভারত। রাশিয়া নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকা তথা পশ্চিমী বিশ্বের নিন্দা প্রস্তাবে ভোটাভুটি থেকে বিরত থেকেছে ভারত। কিন্তু সরাসরি রাশিয়া-বিরোধী অবস্থান না নিলেও একইসঙ্গে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বারবার নিন্দা করে অবিলম্বে তা বন্ধ করার বার্তাও দিয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মান্যতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক বিভিন্ন মঞ্চে। নয়াদিল্লির যুক্তি, এই ‘ভারসাম্যের কূটনীতির’ ফলে কোনও রাস্তাই পুরোপুরি বন্ধ রইল না। উপরন্তু দরকষাকষির জায়গাটাও রইল। আমেরিকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্তা দিলীপ সিংহ গত সপ্তাহে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েই বলে গিয়েছিলেন, রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করে সে দেশের সরকারের হাত শক্ত করলে, পরিণাম ভোগ করতে হবে ভারতকে। ব্রিটেনও প্রায় এক সুরেই কথা বলে। কিন্তু তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ভারত তার বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরি করে নিজেদের জাতীয় স্বার্থের নিরিখে। সেক্ষেত্রে অন্য কোনও দেশের মাথা গলানোর প্রয়োজন নেই। শুধু বলাই নয়, এই যুদ্ধের আবহেই রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ নয়াদিল্লি এসে শস্তায় ভারতকে অশোধিত তেল বিক্রির বিলি ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকও করে গিয়েছেন।
লাভরভের ভারত সফরের পরে সে দেশ থেকে তেল কেনা নিয়ে কোনও নেতিবাচক কথা কিন্তু বলতে শোনা যায়নি আমেরিকাকে। বরং বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন আশা করে ইউক্রেনের উপরে হামলা বন্ধ করতে ভারত রাশিয়ার উপর তার প্রভাব কাজে লাগাবে। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ভারত যতটা বাণিজ্যিক ভাবে তাদের উপরে মস্কোর নির্ভরশীলতা বাড়াতে পারবে, বর্তমান ভূকৌশলগত পরিস্থিতিতে আমেরিকা এবং ইউরোপের কাছে ততটাই গুরুত্ব বাড়বে মোদী সরকারের। রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক এখন কম দেশেরই। ফলে ভারত হিংসা বন্ধের জন্য মস্কোর সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারবে।