রাশিয়ার প্রশংসা কুড়িয়ে নিল ভারত। -ফাইল ছবি।
ভোট না দেওয়ায় কী উপকারই না হয়েছে রাশিয়ার! তাই প্রশংসা পেতেও দেরি হল না দিল্লির।
ইউক্রেন পরিস্থিতিতে বিশ্বের জনমত যখন আক্রান্ত কিভের দিকে, তখন রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা করে আনা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটিতে বিরত থেকে মস্কোর প্রশংসা কুড়িয়ে নিতে দেরি হল না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের।
দিল্লিতে রুশ দূতাবাসের তরফে ভারতের এই অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে শনিবার। বলা হয়েছে, ভারতের এই অবস্থান ‘স্বাধীন ও ভারসাম্য রক্ষাকারী’।
নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে যে সব দেশের, ভারসাম্যের দাঁড়িপাল্লাটা রাশিয়ার দিকে ঝুঁকিয়ে রাখতে তাদের মধ্যে শুক্রবার ভারত যেমন চেষ্টার কসুর করেনি, তেমনই বিরত থেকেছে চিন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও। তারই স্বীকৃতি হিসাবে রাশিয়ার হাতেগরম শংসাপত্র দিল্লি পেয়ে গেল ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই।
দিল্লিতে ভারতের অবস্থানের প্রশংসা করে টুইটারে দেওয়া রুশ দূতাবাসের একটি বিবৃতিতে শনিবার বলেছে, 'আমরা ভারতের অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করছি। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে ভারত স্বাধীন ও ভারসাম্য রক্ষাকারী অবস্থান নিল। এই বিশেষ পরিস্থিতিতে রাশিয়া ইউক্রেন নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হল।'
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, অন্যান্য বারের মতো কোনও জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যার ক্ষেত্রে ভারত এ বারও দু’নৌকোয় পা রাখার নীতিই অবলম্বন করেছে। নিজের বলিষ্ঠ অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। চায়নি। ঠান্ডা যুদ্ধের যুগে রাশিয়ার দিকে বরাবর ঝুঁকে থাকার পর সেই যুগ-পরবর্তী সময়েও ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক মধুরই থেকেছে। ভারতকে এখনও সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সমরাস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়া। তাই নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা করতে চায়নি ভারত, সরাসরি। আবার বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হয়েও ভারত ভোটাভুটিতে সরাসরি রাশিয়ার পক্ষ না নিয়ে আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে থাকা ‘কোয়াড’ জোটের সদস্য দেশগুলিকেও চটাতে চায়নি।
হামলা শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলেছেন।
নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে ভারতের কী অবস্থান হবে তা নিয়ে সকলেরই কৌতূহল ছিল। তাই সেই ভোটের ফলাফল জানার পরেই ভারতকে দিয়ে ইউক্রেন সমস্যার জট খোলার চেষ্টা শুরু করেছে ওয়াশিংটনও। ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনগুলি যাতে রক্ষিত হয়, সে ব্যাপারে রুশ প্রেসিডেন্টকে বোঝাতে আমেরিকার তরফে ইতিমধ্যেই ভারতের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে।
আমেরিকার বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র নেড প্রাইস শনিবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে রাশিয়ার। যা আমাদের (আমেরিকা) সঙ্গে নেই রাশিয়ার। তাই ভারতকে বলা হয়েছে রাশিয়াকে বোঝাতে। আর যে দেশগুলির সুসম্পর্ক রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে, তাদেরও বলা হয়েছে।’’