queen elizabeth

নিয়ম ভেঙে আমার মনের কথা বলে ফেলেছিলাম রানিকে

একাধিক অনুষ্ঠানে রানির দেখা পেয়েছি। তবে সে সব দূর থেকে দেখা। কথা বলার সুযোগ হয়নি। সে সুযোগও এসে গিয়েছিল এক দিন।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:২১
Share:

রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। ফাইল ছবি

সারা শরীর জুড়ে বার্ধক্যের ছাপ। বয়সের ভারে শীর্ণ ছোট্ট দেহটা খানিক ঝুঁকে পড়েছিল মাটির দিকে। তবু নবতিপর বৃদ্ধার চোখের দীপ্তি ফিকে হয়নি এতটুকু। সমান উজ্জ্বল। তিনি ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ।

Advertisement

সৌভাগ্যক্রমে, কমনওয়েল্‌থ ডে-র আয়োজন বা বাকিংহাম প্যালেসের গার্ডেন পার্টি— একাধিক অনুষ্ঠানে রানির দেখা পেয়েছি। তবে সে সব দূর থেকে দেখা। কথা বলার সুযোগ হয়নি। সে সুযোগও এসে গিয়েছিল এক দিন। রানির কথা বললে তাই বারবার সেই দিনটাই মনে পড়ে।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সে দিন ভারতের স্বাধীনতার ৭০ বছর উপলক্ষে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল বাকিংহাম প্যালেসে। একটি ছোট দলের সঙ্গে সরাসরি পরিচয় করবেন রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন প্রিন্স ফিলিপ, যুবরাজ চার্লস ও ক্যামিলা, রাজকুমার উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেট। উত্তেজনায় ফুটছিলাম সে দিন, কারণ সাক্ষাৎকারীদের দলে ছিলাম আমিও।

Advertisement

বিশেষ অতিথিদের সঙ্গে পরিচয় করতে প্রাসাদের একটি ঘরে উপস্থিত হন রানি ও তাঁর স্বামী ফিলিপ। আমরা লাইন দিয়ে দাঁড়াই। একে একে সবার পরিচয় করার পালা। রাজপরিবারের নিয়ম হল, পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়ে রানিকে হয় ঝুঁকে অভিবাদন জানাতে হবে, নয়তো করমর্দন করতে হবে। আমি দ্বিতীয়টাই বেছে নিই। হাত বাড়িয়ে দিই করমর্দনের জন্য। কিন্তু এর পরের নিয়ম হল, রানি কিছু না বলা পর্যন্ত কোনও কথা বলা যাবে না। অর্থাৎ নিজে থেকে বাক্যালাপ শুরু করা যাবে না। এ বারে আর পারলাম না। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বলে ফেলি মনের কথাটা! এমন সুযোগ তো আর বারবার আসবে না জীবনে।

সে বছরই আমার লেখা বই ‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আব্দুল’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল একটি ফিল্ম। কয়েক মাসের মধ্যেই তার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার কথা। সে কথা রানিকে নিজমুখে না বলে থাকা যায়! ওঁকে বলি, আমি একটি বই লিখেছি, রানি ভিক্টোরিয়া ও তাঁর ভারতীয় ভৃত্য আব্দুল করিমকে নিয়ে। বইটি লেখার সময়ে উইনসর প্রাসাদের আর্কাইভে বসে পড়াশোনা করেছিলাম। আমাকে এতটা সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। কথা শেষ হতেই রানি বলেন, ‘‘বাহ, আনন্দের কথা। জেনে ভাল লাগল।’’ তাঁর মুখে একটা মিষ্টি হাসি। উত্তেজনায় আমার মুখ থেকে গড়গড় করে বেরিয়ে যায় পরের শব্দগুলো, ‘‘বইটা থেকে একটা ফিল্ম হয়েছে।’’

—‘‘তাই নাকি!’’ বলছিলেন রানি।

এই প্রশ্রয়টুকু পেতেই জানিয়েছিলাম, জুডি ডেঞ্চ অভিনয় করেছেন রানি ভিক্টোরিয়ার চরিত্রে। বুঝতে পেরেছিলাম, আমার শিশুসুলভ উত্তেজনা দেখে রানি যারপরনাই খুশি হয়েছেন।

হঠাৎ খেয়াল হয় আমার জন্য লাইনটা আটকে রয়েছে। এক তো নিয়ম ভেঙে আগবাড়িয়ে কথা বলেছি, তার উপর এত কথা! ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে যাই। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রানির স্বামী তথা ডিউক অব এডিনবরা ফিলিপ। এত ক্ষণ রানিকে যা যা বলেছি, সব শুনেছিলেন তিনিও। তাঁর মুখেও হাসি। করমর্দন করে বলেন, ‘শুভ সন্ধ্যা’।

সেই সন্ধ্যায় বারবার শুধু ঘুরেফিরে মনে হয়েছিল একটাই কথা, আমি পেরেছি। রানিকে জানিয়েছি আমার বইয়ের কথা। ফিল্মের কথা। জানি না উনি ফিল্মটা দেখেছিলেন কি না। যুবরাজ চার্লস ও তাঁর স্ত্রী ক্যামিলা যে দেখেছিলেন, তা জানি। ফিল্মের গল্প নিয়ে ক্যামিলা এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে আইল অব ওয়াইটে চলে যান। সেখানে অসবোর্ন হাউসে বসে অভিনেত্রী জুডি ডেঞ্চের সঙ্গে ছবিটি দেখেছিলেন তিনি। গল্পের কাহিনির পটভূমি ছিল এই প্রাসাদই। রানি ভিক্টোরিয়া ও তাঁর স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টের জন্য এই প্রাসাদটি তৈরি করা হয়েছিল। এটি ছিল তাঁদের গ্রীষ্মকালীন আবাস।

রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের কথা ভুলতে পারব না। বারবার মনে পড়বে। আমার জীবন জুড়ে তিনি আছেন। হয়তো সে দিন ও ভাবে রাজপ্রাসাদের নিয়ম ভেঙে ফেলেছিলাম ঠিকই, কিন্তু উনি বুঝেছিলেন আমার মনের কথা...।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement