মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো।
মার্কিন নিশানায় পাকিস্তান, চিনও। খাতায়-কলমে না হলেও সংখ্যালঘু স্বার্থরক্ষা নিয়ে নয়াদিল্লিকে আগেই বার্তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি
ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দেশে যে সরকারই থাক আমেরিকা ধর্মাচরণের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সেই ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনেরই গুরুতর অভিযোগে পাকিস্তান, চিনের মতো বেশ কয়েকটি দেশকে বিশেষ ‘পর্যবেক্ষণ তালিকা’-য় রাখল আমেরিকা। ‘আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা আইন, ১৯৯৮’-এর প্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বর ওই তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে গত কাল জানিয়েছে মার্কিন বিদেশ দফতর। নজরদারি তালিকায় রয়েছে মায়ানমার, উত্তর কোরিয়া, সৌদি আরব, সুদান, তুর্কমেনিস্তান, রাশিয়া, উজবেকিস্তান এবং নাইজেরিয়াও।
পম্পেয়োর অফিস যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে বলা আছে— ‘‘সংখ্যালঘুর অধিকারকে পরম শ্রদ্ধার চোখে দেখে আমেরিকা। বিশ্বের যে কোনও সময়ে, যে কোনও জায়গায় সব মানুষের সসম্মানে বাঁচার অধিকার রয়েছে। মৌলিক এই অধিকার কোথাও লঙ্ঘন হলে সেই রাষ্ট্র বা সংগঠনকে ছেড়ে কথা বলব না।’’
অভিযোগ, ধর্মদ্রোহের অভিযোগে ৪০ জন সংখ্যালঘুকে জেলবন্দি করে রেখেছে ইসলামাবাদ। কয়েক জনকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আর্জি জানিয়ে চলতি বছরের জুনেই পাকিস্তানকে চিঠি লিখেছিলেন মার্কিন বিদেশসচিব পম্পেয়ো। শুক্রবার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক ২০১৮-র বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করে মার্কিন বিদেশ দফতর জানাল,
ধর্মদ্রোহ আইনকে হাতিয়ার করে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধে আরও সক্রিয় হতে হবে।
পাকিস্তানে ধর্মদ্রোহের মামলায় শাস্তি জরিমানা থেকে প্রাণদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। আমেরিকার দাবি, ইসলামকে অপমান করার অভিযোগে বালোচ, সিন্ধি, আহমেদিয়া-সহ দেশের প্রায় সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকেই রোজ হেনস্থা করা হচ্ছে পাক-মুলুকে। মামলা দায়ের পরে কেউ-কেউ রাতারাতি উধাও হয়েও যাচ্ছেন বলে সুর চড়িয়েছে ওয়াশিংটন।
নজরদারি তালিকায় রেখে চিনকেও কড়া বার্তা দিয়েছে আমেরিকা। শিনজিয়াং প্রদেশে প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের নির্দেশে কী ভাবে ১০ লক্ষ উইঘুরকে আটক করে রাখা হয়েছে, সম্প্রতি তা ফাঁস করে দিয়েছে ‘চায়না কেবলস’। বেজিং যদিও গোড়া থেকেই দাবি করে আসছে, এই সংখ্যালঘুরা আদতে জঙ্গি। এবং যাকে ‘ডিটেনশন সেন্টার’ বলা হচ্ছে, তা নাকি আসলে ‘প্রশিক্ষিণ শিবির’— যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী উইঘুরদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর কাজ চলছে। ওয়াশিংটন বলছে, এ সব ছেঁদো যুক্তি। কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন উইঘুরদের উপরে নির্যাতন নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে। ফাঁস হয়ে যাওয়া চিনা নথি ‘চায়না কেবলস’ মার্কিন সংবাদমাধ্যমের হাতে আসার পর থেকে সুর চড়াতে শুরু করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও। উইঘুরদের অধিকার রক্ষায় চলতি মাসেই একটি আইনে সই করেছেন ট্রাম্প। যে আইনে প্রভাবশালী চিনা পলিটবুরোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সংস্থান আছে বলে হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর। ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘুদের উপরে অনৈতিক নজরদারি চালানোর অভিযোগে কয়েক জন শীর্ষ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তার পাশাপাশি ২৮টি চিনা সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ওয়াশিংটন।
আল কায়দা, আল শাবাব, বোকো হারাম, হুথি, আইএস, তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠীকেও পর্যবেক্ষণ তালিকায় রেখেছে আমেরিকা।