আদালতে পুলিশের গাড়িতে রোজিনা ইসলাম। নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশের বিশিষ্ট অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন হল না। শুক্র ও শনিবার আদালত ছুটি থাকায় এই সিদ্ধান্তের জন্য রবিবার পর্যন্ত জেলে অপেক্ষা করতে হবে অসুস্থ রোজিনাকে।
বৃহস্পতিবার আদালতে তথ্য চুরির দায়ে ১৯২৩ সালের একটি আইনে অভিযুক্ত সাংবাদিকের জামিনের বিরোধিতা করেন শেখ হাসিনা সরকারের কৌঁসুলিরা। অন্য দিকে তাঁর পক্ষে আইনজীবীরা দাবি করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একের পর এক দুর্নীতি প্রকাশ্যে আনার কারণে ওই দফতরের আমলা-কর্মীরা রোজিনার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যে সরকারি নথি চুরি ও তার ছবি তোলার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনও প্রমাণ দাখিল করা হয়নি। বিচারক দু’পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনে রায় দানের জন্য কিছু ক্ষণ সময় চান। তার পরে আদালত কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, এ দিন আর সেই রায় দেওয়া হবে না। দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটির পরে রবিবার আদালত খুললে সিদ্ধান্ত জানাবেন বিচারক।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় রোজিনা ইসলাম বাংলাদেশে জনপ্রিয় নাম। সম্প্রতি টিকা বণ্টন এবং করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতরের নানা খামতি ও দুর্নীতি নিয়ে তিনি পর পর প্রতিবেদন লিখেছেন। সোমবার নিজে করোনার টিকা নেওয়ার পরে রোজিনা সচিবালয়ে এক স্বাস্থ্য কর্তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে আমলা-কর্মীরা তাঁকে একটি ঘরে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখে। তাঁকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ। অসুস্থ হয়ে সাংবাদিক বমি করতে থাকলেও মুক্তি দেওয়া হয়নি। তার পরে সরকারি তথ্য চুরির দায়ে রোজিনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ তাঁকে আদালতে তুলে হেফাজতের আর্জি জানালেও বিচারক তা খারিজ করে রোজিনাকে জেলে পাঠান। রোজিনা জামিনের আবেদন করলে এ দিন তার শুনানি নির্দিষ্ট করা হয়।
এক শ্রেণির আমলা ও মন্ত্রী যেমন রোজিনার বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছেন, তাঁর মুক্তির দাবিতে এককাট্টা বাংলাদেশের সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি। রাষ্ট্রপুঞ্জও রোজিনার গ্রেফতারে উদ্বেগ জানিয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। দলের নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, “সাংবাদিককে এ ভাবে তথ্য চুরির ধারায় আটক করা যায় না।” রোজিনাকে ‘চোর’ প্রমাণে উঠেপড়ে লাগা শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রীকে বয়কটের ডাক দিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। ঢাকা-সহ বাংলাদেশের সর্বত্র বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাংবাদিকেরা। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সংবাদিকদের সংযত হতে বলে মন্তব্য করেছেন, “ওই সাংবাদিকই হয়তো ভুল করেছেন!”