খড়্গপুর আইআইটি —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় আগ্নেয়গিরিতে সাড়ে ছ’কোটি বছর আগে ঘটে যাওয়া এক অগ্ন্যুৎপাত। তার প্রভাবে মৃত্যু হয়েছিল ডাইনোসর-সহ নানা প্রজাতির প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাণীর। সেই আগ্নেয়গিরির নানাস্তরে জমে রয়েছে গাছের জীবাশ্ম। এ বারসেই জীবাশ্মের আইসোটোপবিশ্লেষণ করে বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে বৃষ্টিপাত বাড়ার সম্ভাবনা উঠে এল আইআইটির গবেষণায়।
খড়্গপুর আইআইটির জিওলজি ও জিওফিজ়িক্স বিভাগের এই গবেষণা গত কয়েক বছর ধরে চলেছে এই বিভাগের অধ্যাপক অনিন্দ্য সরকারের নেতৃত্বে। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৌরেন্দ্র ভট্টাচার্য ও গবেষক পড়ুয়া সম্বরণ ঘোষ মৌলিক। গবেষণায় আইআইটি, খড়্গপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তাইপে-র অ্যাকাডেমিয়া সিনিকা। সেই গবেষণা বলছে, সাড়ে ৬ কোটি বছর আগে মধ্য ও পশ্চিম ভারতীয় আগ্নেয়গিরি ডেকান ট্র্যাপে অগ্ন্যুৎপাতের সময় বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছিল। প্রায় ১০ লক্ষ বছর ধরে চলা সেই অগ্ন্যুৎপাতের নানা পর্যায়ে বৃষ্টিপাতের মাত্রা কত ছিল, তা-ও নথিভুক্ত করা হয়েছে এই গবেষণায়।
তার প্রেক্ষিতে এখন বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের যে মাত্রা রয়েছে, তা দেখেই চোখ কপালে উঠেছে আইআইটির গবেষকদের। এখন যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রয়েছে, তা আগামী কয়েক বছরে ৪০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন ঘটনায় সাড়ে ছ’কোটি বছর আগের অগ্ন্যুৎপাতের সময় হওয়া বৃষ্টিপাতের পরিমাণের তুলনায় সেই দিন খুব পিছিয়ে নেই বলেই দাবি আইআইটির। গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক অনিন্দ্য বলেন, ‘‘কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতেই বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন ঠেকাতে না পারলে প্রবল বৃষ্টিপাতে ব্যাপক বিপর্যয় হওয়া সময়ের অপেক্ষা।’’ সেই প্রবল বৃষ্টিপাত বড়সড় বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে দাবি করা হয়েছে এই গবেষণায়। দেখা গিয়েছে, সাড়ে ছ’কোটি বছর আগে আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের পরে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ছিল এক হাজার পিপিএম।
আইআইটির গবেষকদের দাবি, বিশ্ব উষ্ণায়নের আগে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ২৮০ পিপিএম ছিল। তবে গত ২০০ বছরে পেট্রোলিয়ামের ব্যবহারে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা ৪২০ পিপিএমে পৌঁছেছে। অনিন্দ্যর মতে, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি তাতে ভারতের মতো দেশেকয়লা, পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার কমিয়ে আনা উচিত।’’