খলিস্তানপন্থী: নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জর খুনের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ পাকিস্তানের পেশোয়ারে। ছবি: রয়টার্স।
নিজের সংখ্যালঘু সরকারকে বাঁচাতেই খলিস্তানিদের বিষয়টিকে ‘গিলতে’ বাধ্য হচ্ছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এ কথা যে বিদেশ মন্ত্রকের অজানা, তা নয়। কূটনৈতিক মহল বলছে, কানাডার সঙ্গে খলিস্তানি সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জটিলতা বাড়ছিল। যা প্রশমিত করা সম্ভব হয়নি। অথচ কূটনীতির পাশাপাশি বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক কারণেও অগ্রাধিকার দিয়ে বিষয়টিকে সমাধান করা বা প্রশমিত করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বিপদের বীজকে গুরুত্বই দেয়নি।
ফলে সমস্যা এড়ানো যায়নি, বরং তা বেড়েছে। কানাডার সঙ্গে ভারতের সংঘাতের যে ছবি বিশ্বের সামনে চলে এসেছে, তা নয়াদিল্লির কাছে অত্যন্ত অস্বস্তির। পাশাপাশি ভারতের শেয়ার বাজারে কানাডার যে ১.৭৭ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা আছে, চলতি অস্থিরতা সেই বিপুল বিনিয়োগকেও বড় ঝুঁকির সামনে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যে সব ভারতীয় কানাডা যাচ্ছেন, তাঁদের চূড়ান্ত সতর্কতা নেওয়ার জন্যও নির্দেশিকা জারি করতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র।
আজ নয়, দীর্ঘদিন ধরেই কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সরকার শিখ উগ্রপন্থী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে নরম মনোভাব নিয়ে চলছে। বিষয়টি ভারতের কূটনৈতিক ডেস্কের অজানা থাকার কথা নয়। তার কারণ ট্রুডো একটি সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যে সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁকে সমর্থন নিতে হচ্ছে নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির। এই নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা জগমীত সিংহ খলিস্তানি নেতাদের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত। ট্রুডো ভারতের বিরুদ্ধে খলিস্তানি নেতা হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনার পরেই জগমীত সিংহ বিবৃতি দিয়ে ভারতের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছেন। ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতি এবং সরকার টিকিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতার জন্য ট্রুডোকে খলিস্তান প্রসঙ্গে চোখ বুজে থাকতে হয়েছে বরাবর। এই নিয়ে ভারতীয় কূটনৈতিকদের আবেদন, অনুরোধে তিনি কর্ণপাত করেননি।
কানাডার সঙ্গে এই সংঘাতকে এড়়াতে না পারলেও আত্মবিশ্বাসী সাউথ ব্লক ঘরোয়া ভাবে বুধবার দাবি করছে, এ ব্যাপারে জাস্টিন ট্রুডো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভারতের বিরুদ্ধে চাইলেও খেপিয়ে তুলতে পারবেন না। সেই চেষ্টা কানাডার তরফে আগেই করা হয়েছিল
বলে খবর। ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোদের তির ছোড়ার আগে কানাডার সরকারি কর্তারা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে তাদের মিত্র রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে (আমেরিকা-সহ একাধিক দেশ) দেখা করে কথা বলেছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত খবর, তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। ভারতের বিরুদ্ধে কোনও নেতিবাচক বিবৃতি দিতে রাজি হয়নি তারা। তবে কানাডার অভিযোগ নিয়ে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানা গিয়েছে।