মুশতাক আহমেদ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি এবং জেল হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভে আজও উত্তাল হয়েছে ঢাকা।
পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে রবিবার পুলিশ ও সাংবাদিক-সহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। পুলিশ লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে নামলে পাল্টা ইট-পাথর উড়ে আসে। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিশকে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, রবারের গুলিও ছুড়েছে পুলিশ। বিরোধী বিএনপির ছাত্র সংগঠন রবিবার প্রেস ক্লাব সংলগ্ন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। কয়েকশো ছাত্র সেখানে জড়ো হওয়ার পরে পুলিশের এক অফিসার বলেন, অনুমতি না-থাকায় এই কর্মসূচি করা যাবে না। ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। এক দল ছাত্র মাথা বাঁচাতে প্রেস ক্লাবে আশ্রয় নেন। পুলিশ সেখানে ঢুকে তাঁদের মারধর করে। এর পরে বিক্ষোভকারীরা পাল্টা ইট-পাথর ছোড়া শুরু করেন। তার পরেই পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। আটকে পড়া বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করে ভ্যানেও তোলে।
শাসক আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ দিন কারাগারে লেখকের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই বিক্ষোভকে ‘ষড়যন্ত্র করে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা’ বলছেন শাসক দলের নেতারা। তাঁদের যুক্তি, জঙ্গিরা যখন একের পর এক লেখক ও ব্লগারের উপরে হামলা করেছে, বিএনপি নিন্দাটুকুও করেনি। এখন আন্দোলনের নামে জনজীবনে অশান্তি সৃষ্টি করতে নেমেছে।
কিন্তু যে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে এই বিক্ষোভ, কে তিনি? তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, লেখক হিসাবে মুশতাক যত না পরিচিত, তার চেয়ে বেশি লোকে তাকে ‘কুমিরম্যান’ নামে চেনে। আগাগোড়া পরিবেশ পাগল ৫৩ বছরের মানুষটা বাংলাদেশে প্রথম কুমিরের খামার স্থাপন করেন। ২০১০-এ জুনে তাঁর হাত ধরে জার্মানিতে প্রথম ৬৩টি কুমির রফতানি করে বাংলাদেশ। তার আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার শাখার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী হিসেবে সুন্দরবনে কয়েক বছর কাটিয়েছেন। সেখানে থাকতেই কুমির খামারের চিন্তা মাথায় আসে। এই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে মুশতাক প্রথম বইটি লেখেন। কিন্তু ২০১৪-য় ব্যবসায়িক সঙ্গীর সঙ্গে মনোমালিন্যে ময়মনসিংহের ভালুকার ওই খামার ছেড়ে দেন তিনি। মূলত পরিবেশ নিয়ে সোশ্যাল সাইটে লেখা পোস্ট করতেন মুশতাক। তাতে অরণ্য রক্ষায় সরকারের ঔদাসীন্য এবং শাসক দলের মৌরসিপাট্টা ও দুর্নীতির অভিযোগও থাকত। সেই জন্যই তাঁকে ডিজিটাল নিরাপত্তার জালে পড়তে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, পশু-পাখি নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম একটি প্রমোদ-পার্ক করার পরিকল্পনা নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছিলেন মুশতাক। জমি দেখা ও লগ্নিকারী খোঁজাও শেষ হয়েছিল। কিন্তু ১০ মাস আগে গ্রেফতার হওয়ার পরে সব থেমে যায়।