—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
ইরাকে ব্যক্তিগত আইন সংশোধনের জন্য চাপ দিচ্ছে সে দেশে শিয়া সমর্থিত দলগুলি। সেই দাবি মেনে সংশোধন হলে ইরাকে ন’বছরেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যাবে। রবিবার প্রথম বার এই সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে সংসদে। তার পরেই সরব সে দেশের মহিলা এবং শিশু অধিকার সংগঠনগুলি।
প্রশ্ন উঠছে, ঠিক কী সংশোধন চাইছে শিয়া দলগুলি? সংবাদ সংস্থা ‘মিডল ইস্ট আই’ জানিয়েছে, ইরাকে ১৯৫৯ সালের ব্যক্তিগত আইনের ১৮৮ নম্বর আইন সংশোধনের দাবি উঠেছে। এই আইন পাশ করিয়েছিল আবদুল-করিম কাশিমের সরকার। কাশিম ছিলেন বামপন্থী। বেশ কিছু সংস্কারপন্থী আইন এনেছিলেন তিনি। মহিলাদের উন্নয়নের কথা ভেবেছিলেন তিনি। সে সময় পশ্চিম এশিয়ার অন্য কোনও দেশে এ ধরনের আইন ছিল না বলে দাবি করেছেন মহিলাদের অধিকার রক্ষাকর্মী সুহালিয়া আল আসাম। কাশিম সরকারের আইনে পুরুষ এবং মহিলাদের বিয়ের বয়স ধার্য করা হয়েছিল ১৮। পুরুষদের এক স্ত্রী থাকতে দ্বিতীয় বিয়েতেও বাধা ছিল সেই আইনে। মুসলিম নয়, এমন মহিলাকে বিয়ের ক্ষেত্রেও বাধা ছিল না। স্বামী আশ্রয় না দিলে তাঁকে অস্বীকার করার অধিকার মহিলাদের দিয়েছিল ১৯৫৯ সালে তৈরি সেই আইন। তবে বিচারক এবং পাত্র-পাত্রীর অভিভাবকের সম্মতিতে ১৫ বছরেও বিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেই আইনে।
এ বার কট্টরপন্থী শিয়া দলগুলি এই আইনের সংশোধন চাইছে। খসড়া বিলে বলা হয়েছে, দম্পতির মধ্যে মতানৈক্য হলে স্বামীর মতামতই মানতে হবে স্ত্রীকে। আদালতের পরিবর্তে স্বামী-স্ত্রীর বচসা নিয়ে শেষ কথা বলবে শিয়া এবং সুন্নি ধর্মের দফতর। আইনের সংশোধন হওয়ার পর ছ’মাসের মধ্যে তাতে অনুমোদন দিতে হবে শিয়া এবং সুন্নি নেতাদের। বিলে আরও বলা হয়েছে, ‘জাফারি আইন’ মেনে শিয়া আচরণবিধি তৈরি হবে। ষষ্ঠ শিয়া ইমাম জাফর আল সাদিক বিয়ে, বিচ্ছেদ, দত্তক, উত্তরাধিকার নিয়ে যা বলেছেন, তা মেনে চলতে হবে। ‘জাফারি আইন’-এ মেয়েদর বিয়ের বয়স ন’বছর। ছেলেদের বিয়ের বয়স ১৫ বছর। খসড়া বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন নির্দল সাংসদ রায়েদ আল-মালিকি।
ইরাকে মহিলাদের অধিকার রক্ষাকর্মী তামারা আমিরের দাবি, এই বিল পাশ হলে দেশে মহিলা এবং শিশুদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে। অন্য এক সমাজকর্মী সুহালিয়ার প্রশ্ন, রাজনীতিকেরা কি নিজেদের ন’বছরের কন্যার বিয়ে দেবেন? শিয়া সংগঠনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘সংবিধানের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই ব্যক্তি আইন সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছে। শরিয়ত আইন এবং গণতন্ত্রে আঘাত করবে না, এমন যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন ইরাকের বাসিন্দারা।’’