মার্কিন উপ-বিদেশসচিব স্টিফেন বিগান।—ছবি এএফপি।
নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেজিং যে ভাবে সংঘাতের রাস্তা নিচ্ছে তার প্রেক্ষিতে মার্কিন উপ-বিদেশসচিব স্টিফেন বিগান জানালেন, চিনকে ধাক্কা দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। তাঁর মন্তব্য, প্রতিটি ক্ষেত্রেই চিনকে ধাক্কা দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন তাঁরা। চিনের গা-জোয়ারির উল্লেখ করে তিনি ভারতের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা আগ্রাসনের পাশাপাশি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের দখলদারির প্রসঙ্গ তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের বাড়বাড়ন্ত রুখতে ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিলেন স্টিফেন বিগান।
করোনা আবহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতো প্রতিষ্ঠানেও চিনা প্রভাব নিয়ে অসন্তোষ তুলে ধরেছেন বিগান। পাশাপাশি চিন যে ভাবে নিজেদের অভ্যন্তরেও তিব্বতীয় সংস্কৃতি ধ্বংস এবং উইঘুর মুসলিমদের উপরে নিপীড়নের কৌশল নিয়েছে তারও সমালোচনা করেছেন বিগান। ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তির খেলাপ করেই যে চিন হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে সচেষ্ট, তা নিয়েও সরব হয়েছেন বিগান।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিষয়ে সোমবার বিগান জানিয়েছেন, আধুনিক বিশ্বের বাস্তবতাই উঠে আসবে নয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের মাধ্যমে। সেখানে গুরুত্ব পাবে গণতন্ত্র, খোলা বাজার এবং ভারত-আমেরিকার মূল্যবোধ। ভারত-মার্কিন স্ট্র্যাটেজিক ফোরাম আয়োজিত এক সম্মেলনে এই বক্তব্য উঠে এসেছে মার্কিন উপ-বিদেশসচিবের বক্তব্যে।
আজ দুই দেশেরই একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে বিগান জানান, ওই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে অর্থনীতি, পারস্পরিক নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। সেই কৌশলের মধ্যমণি হিসেবে ভারতের থাকা আবশ্যক। নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সুরক্ষা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও দৃঢ় করার কথাও উঠে এসেছে বিগানের বক্তব্যে। মালাবার নৌ মহড়ার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াকে ভারতের তরফে আমন্ত্রণ জানানোকেও কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিগান। তাঁর মতে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এ এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভারত ও মার্কিন নেতৃবর্গের ব্যক্তিগত আলাপচারিতার প্রভাব পড়েছে দু’দেশের সম্পর্কেও। বিগানের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাঁদের ভিন্ন মতাদর্শ সত্ত্বেও সেই সম্পর্ক অটুট। তারই প্রভাবে দু’দেশই নিজেদের কৌশলগত ক্ষেত্রে সফল।
আজ এক প্রশ্নের উত্তরে ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান নিয়ে তৈরি ‘কোয়াড’-এর উল্লেখ করে বিগান জানান, চতুর্দেশীয় এই অক্ষই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব অক্ষুণ্ণ রেখেছে। কোয়াডের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার সঙ্গে গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা বিস্তার, আর্থিক উন্নয়নের প্রভাব ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তাও তুলে ধরেছেন বিগান।