বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ বার প্রকাশ্যে তৎপর হল আমেরিকার জো বাইডেন সরকার। আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার কেবলমাত্র বাংলাদেশের জন্য একটি ভিসা-নীতি ঘোষণা করেছেন, যা নিয়ে ঢাকা সরগরম। ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন— বাংলাদেশের সরকার বা বিরোধী পক্ষের যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে কারচুপি, বলপ্রয়োগ বা আতঙ্ক ছড়িয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ থাকবে, তাঁকে ও তাঁর পরিবারের কাউকে আমেরিকার ভিসা দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সরকারি কর্মচারী, আমলা বা পুলিশ অফিসাররাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন।
সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বর বা ২০২৪-এর জানুয়ারিতে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। ২০১৮-এর ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঢালাও কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর থেকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং বেশ কিছু ছোট বিরোধী দল দেশের কোনও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন হলে আগামী নির্বাচনেও অংশ না-নেওয়ার ঘোষণা করেছে তারা। সম্প্রতি আমেরিকা, জাপান, ইউরোপ এবং কাতার সফরে গিয়ে শেখ হাসিনা বারে বারে সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। কারচুপির অভিযোগকে তিনি পরাজিত বিরোধীদের আক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদাহরণ টেনে বলেছেন— “উনিও তো ভোটের ফল মেনে নেননি, তা হলে কি বলতে হবে আমেরিকার ভোটেও কারচুপি হয়েছে?” পাশাপাশি হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকবে না।
বিরোধীদের দাবি, হাসিনার সফরের পরেই ব্লিঙ্কেনের এই ভিসা-নীতি ঘোষণা বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁর প্রতিশ্রুতিতে আমেরিকার ভরসা নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচারসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি দাবি করেছেন, আমেরিকার এই ঘোষণার পরে হাসিনার পদত্যাগ করা উচিত। অ্যানি বলেন, “নির্বাচনে ঢালাও কারচুপির যে অভিযোগ বিরোধীরা করেছে, তার সারবত্তা অনুধাবন করেই আমেরিকা এই ‘ভিসা-নিষেধাজ্ঞা’ প্রয়োগ করেছে। আমেরিকার এই সরাসরি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা উচিত, কিন্তু জালিয়াতির ভোটে জিতে আসা সরকার তা করতে পারছে না। কারণ, তাদের পাশে মানুষ নেই।”
শাসক আওয়ামী লীগের পক্ষে যদিও বলা হচ্ছে— দেশে যে হেতু অবাধ নির্বাচনই হবে, আমেরিকার এই ভিসা-নীতি অপ্রাসঙ্গিক। বিদেশমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “আমেরিকার এই ঘোষণা আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়কই হবে। তারা বলেছে, ভোটে যারাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাদের ভিসা দেবে না। বিরোধী দলও তার অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে ‘জ্বালাও-পোড়াও’ করে ভোট বানচালের সুযোগ কমল।” এর আগে এক বার নির্বাচন বয়কট করে ভোটের আগের রাতে প্রায় দেড়শো স্কুল জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিএনপি এবং তাদেক শরিক জামাতে ইসলামির বিরুদ্ধে। এই সব স্কুলে বুথ হওয়ার কথা ছিল।
ভিসা-নীতির ব্যাখ্যা দিতে এ দিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতাদের ডেকে আলোচনা করেছেন ঢাকায় আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হ্যাস। দূতাবাসের তরফে টুইটে বলা হয়েছে, ‘আমরা বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের পক্ষে।’ তবে বাংলাদেশের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের এই হস্তক্ষেপ কেন, তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক আমেরিকার ভিসা-নীতি নিয়ে যে বিবৃতি জারি করেছে, সেখানেও এই হস্তক্ষেপের কোনও প্রতিবাদ জানানো হয়নি।