ফাইল চিত্র।
নিয়ম ভাঙলেন খোদ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর সহযোগী। নিয়ম অনুযায়ী নিভৃতবাসে থাকার কথা প্রধানমন্ত্রীরও। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোয়রান্টিনে যাবেন না। এতে ক্ষুব্ধ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, এ কেমন সরকার, নিজের তৈরি নিয়ম নিজেই ভাঙছে!
সম্প্রতি বরিসের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক করোনা-বিধি ভেঙে পদ হারিয়েছেন। গোড়ায় ম্যাটের পাশে দাঁড়ান বরিস। কিন্তু তাতেও পদ-রক্ষা করতে পারেননি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদ থেকে ম্যাটকে ইস্তফা দিতে হয়। এ বারে ডাউনিং স্ট্রিটের পক্ষ থেকে সাংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে ১০ দিন কোয়রান্টিন থাকার সরকারি নিয়ম রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা মানছেন না বরিস জনসন। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগী হলেও তিনি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সংস্পর্শে আসেননি। যদিও ব্রিটেনের একটি দৈনিকের দাবি, দু’জনকে একাধিক অনুষ্ঠানে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে।
ডাউনিং স্ট্রিটের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা কাজে যান। বহু মানুষের সান্নিধ্যে আসেন। সব ক্ষেত্রেই কোভিড-বিধি মেনে চলা হয়।’’ তারা আরও দাবি করেছে, ‘‘এ পর্যন্ত কোনও কোভিড পজ়িটিভ ব্যক্তির কাছাকাছি আসেননি প্রধানমন্ত্রী। সেই সাবধানতা অবলম্বন করা হয়।’’ যদিও বিরোধী দল লেবার পার্টির অভিযোগ, ‘‘নিয়মের ঊর্ধ্বে উঠতে এ সব আসলে বাহানা।’’
ব্রিটেনে গত এক-দেড় সপ্তাহে সংক্রমণ হঠাৎই কিছুটা কমে গিয়েছে। এর কোনও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা অবশ্য দিতে পারেননি বিশেষজ্ঞেরা। তবে অনেকের বক্তব্য, ডেল্টা স্ট্রেনের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি (গোষ্ঠীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা) তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন করে সংক্রমণ কমেছে। তাতেও অবশ্য গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ৩১,৮০৮ জন। মারা গিয়েছেন ৯২ জন। ব্রিটেনে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৬০ লক্ষ ছাড়িয়েছে কাল। মোট মৃত্যু ১,৩০,১৭৮।
টিকাকরণে সবচেয়ে এগিয়ে ব্রিটেন। প্রথম স্থানে রয়েছে তারা। কিন্তু দেশের তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন। দেশের এই অংশের ধারণা, কম বয়সে ইমিউনিটি অনেক বেশি, তাই ভয়ের কোনও কারণ নেই। তাই টিকাকরণে এদের প্রবল অনীহা। সে জন্য রীতিমতো বিজ্ঞাপনী প্রচার শুরু করেছে সরকার। জানানো হয়েছে, একমাত্র ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ় নেওয়া হলেই পার্টি করার অনুমতি দেওয়া হবে।
আমেরিকার ছবিটা ভিন্ন। এই মুহূর্তে ডেল্টা স্ট্রেনের জেরে নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে আমেরিকায়। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, দেশবাসীর অর্ধেকেরই (সব বয়সসীমার) টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। মন্দের মধ্যে ভাল খবর এটাই। টিকাকরণের হারও গত সপ্তাহে ১১ শতাংশ বেড়েছে। দু’সপ্তাহ আগের সঙ্গে তুলনা করলে প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। যদিও ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফডিএ)-এর পরামর্শদাতা পল অফিটের বক্তব্য, অতিমারিকে জয় করতে আরও অনেকটা পথ চলা বাকি। তাঁর কথায়, ‘‘দিনে এক লক্ষের বেশি সংক্রমিত। গত কাল এক দিনে ৬০০ জন মারা গিয়েছেন। এটাই তো বলে দেয়, আমরা এখনও লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি।’’