ফাইল চিত্র।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহে আমেরিকা যাচ্ছেন পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মইদ ইউসুফ এবং পাক গুপ্তচর আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈয়জ় আহমেদ। ওয়াশিংটনে তাঁরা আমেরিকার প্রতিরক্ষা ও বিদেশ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবেন বলে খবর। সেপ্টেম্বরে আমেরিকান ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি চলে যাওয়ার পরে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটিতে কী ভাবে শান্তি ফিরিয়ে আনা যেতে পারে, সে বিষয়েই আলোচনা করবেন আফগান-প্রতিবেশী পাকিস্তানের এই দুই শীর্ষ কর্তা। আজ একটি পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে এই কথা জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তান যে ভাবে ফের তালিবানের দখলে চলে যাচ্ছে, তা নিয়ে তার প্রতিবেশী দেশগুলি তো বটেই, যথেষ্ট চিন্তায় আমেরিকাও। দীর্ঘ দু’দশক ধরে আফগানিস্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলানোর পরে এ বার দেশে ফিরছে আমেরিকান বাহিনী। তালিবানের কাছে আমেরিকার শর্ত ছিল, বিদেশি বাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে গেলে তালিবানকেও সুনিশ্চিত করতে হবে যাতে সে দেশে কোনও জঙ্গি সংগঠন ঘাঁটি না-গাড়তে পারে। আমেরিকা-সহ আন্তর্জাতিক মহলের আশা ছিল, গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে কাতারের দোহায় তালিবান, আশরাফ গনি সরকার ও আমেরিকার মধ্যে দফায় দফায় যে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা চলছে, তাতে এ বছর সেপ্টেম্বরের আগেই কোনও একটা রফাসূত্র বেরোবে এবং আমেরিকান বাহিনী থেকে আফগান বাহিনীর হাতে দেশের ক্ষমতার হস্তান্তর সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি। আমেরিকান সেনাকর্তারাই জানাচ্ছেন যে, তালিবান ক্রমাগত হামলা চালিয়ে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছে। অন্য দিকে, গত দু’সপ্তাহের লড়াইয়ে এটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ভারত ও আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণ ও সামরিক সাহায্য পাওয়ার পরেও তালিবান দমনে আফগান বাহিনী এখনও সম্পূর্ণ তৈরি নয়।
এই পরিস্থিতিতে সামনের সপ্তাহে কাবুল হয়ে ভারতে আসছেন আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। ফলে আফগান-সমস্যাই যে তাঁর আলোচনায় মুখ্য স্থান নেবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ব্লিঙ্কেনের কাবুল ও নয়াদিল্লি সফর এবং পাক কর্তাদের ওয়াশিংটন সফর— সব কিছু একই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ বলে পাক সংবাদমাধ্যমে আজ দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘‘আফগানিস্তানের পরিস্থিতির উন্নতি করতে, সে দেশে সুষ্ঠু ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে শান্তি ফিরিয়ে আনতে, আমেরিকা যে কূটনৈতিক দৌত্য চালাচ্ছে, পাকিস্তানের সেখানে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’’ সম্প্রতি, আমেরিকান বিদেশ দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস-ও বলেছিলেন, ‘‘আফগানিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে সে দেশের সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে কূটনৈতিক দৌত্যে অংশ নিতে হবে।’’ জঙ্গি-দমনে ইমরান খান সরকারের ভূমিকা নিয়ে আদপেই খুশি নয় ওয়াশিংটন। সেই ক্ষতে মলম দেওয়ার জন্য এখন আফগান-কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসালামাবাদ।
এ দিকে, কাল জানা গিয়েছিল যে, আফগান বাহিনীকে সাহায্য করতে কন্দহর ও হেলমন্দ প্রদেশে তালিবান ঘাঁটিগুলির উপরে আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে আমেরিকান সেনা। আজ এই হামলার কথা মেনে নিয়ে তালিবান মুখপাত্র হুমকির স্বরে বলেন, ‘‘আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ এবং মুজাহিদিনের (ধর্মীয় যোদ্ধা) উপরে আমেরিকার এই হামলা শান্তি-চুক্তির পরিপন্থী। আমেরিকাকে এর ফল ভুগতে হবে।’’