প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল সরকার পক্ষ। ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল সরকার পক্ষ। পিএমএল(এন) প্রধান নওয়াজ় শরিফ ইমরান খানের সেই প্রস্তাব সম্বন্ধে আজ টুইট করে জানান, ‘রাজনীতিকদের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু যারা জঙ্গি ও দাঙ্গাকারী, যারা সরকারি ভবন জ্বালিয়ে দেয়, শহিদদের মূর্তি ভেঙে ফেলে এবং সারা দেশে দাঙ্গার আগুন ছড়িয়ে দেয়, তাদের সঙ্গে কোনও কথা বলা হবে না।’
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানকে গত ৯ মে পাক রেঞ্জার্স গ্রেফতার করার পরে সারা দেশ জুড়ে তাণ্ডব চালান পিটিআই নেতা-কর্মীরা। তার পর থেকেই প্রবল ধরপাকড় চলেছে। সে দিনের সেই তাণ্ডবের নিন্দা করে দল ছেড়েছেন ইমরান-ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েক জন পিটিআই নেতা। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় গত কাল ইমরান বলেছিলেন, ‘‘আমি সরকার পক্ষের কাছে আলোচনার জন্য আর্জি জানাচ্ছি। না হলে ক্রমশ নৈরাজ্যের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ।’’ ইমরানের এই প্রস্তাব সম্পর্কে গতকাল কোনও মন্তব্য করেনি পিএমএল(এন)-পিপিপি জোট সরকার। আর আজ সকালেই পিএমএল(এন) সুপ্রিমো তথা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের দাদা নওয়াজ় শরিফ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘দাঙ্গাবাজ়’ দলের নেতার সঙ্গে তাঁরা কোনও কথাই বলবেন না। গত কালই আলোচনার জন্য সাত সদস্যের একটি দল গঠন করেছেন ইমরান খান। সে প্রসঙ্গে পিএমএল(এন)-এর মুখপাত্র তথা দেশের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজ়েব আজ এক বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘‘একে একে তাঁর সব সঙ্গী দল ছেড়ে যাওয়ার পরে এখন আলোচনায় বসতে চাইছেন ইমরান খান! কিন্তু যারা দেশকে আক্রমণ করে, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়, তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় বসা হয় না।’’
মরিয়ম আরও দাবি করেন, ইমরান এখন ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন অর্ডিন্যান্স (এনআরও)-এর সাহায্য নিতে চাইছেন। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ় মুশারফের আনা এই বিতর্কিত অধ্যাদেশের সাহায্যে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাষ্ট্রনেতারা ক্ষমা পেয়ে যেতে পারেন। ২০০৭ সালে এই অধ্যাদেশ প্রয়োগ করে পিপিপি প্রধান বেনজ়ির ভুট্টোকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন মুশারফ। মরিয়ম আওরঙ্গজ়েবের দাবি, আলোচনার নাম করে ইমরান এ বার সরকার পক্ষকে চাপ দেবেন, যাতে তাঁকে এনআরও-ও সুবিধা দেওয়া হয়। ইমরানকে ‘বিদেশি চর’ ও ‘তোষাখানার চোর’ আখ্যা দিয়ে মরিয়ম দাবি করেন, ‘‘৬ হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন ইমরান। তাই তাঁর বিরুদ্ধে মকদ্দমা করা হয়েছে, তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনও প্রশ্নই নেই।’’ পিপিপি-র নেত্রী শাজ়িয়া মারির কথায়, ‘‘ইমরান তাঁর নিজের সন্তানদের লন্ডনে রেখে দিয়ে দেশের সন্তানদের হিংসায় অংশ নিতে, দেশবিরোধী কাজ করতে মদত দিয়েছেন। ৯ মে-র তাণ্ডবের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাঁর।’’ মারি-র দাবি, এর আগে পিপিপি চেয়ারম্যান ও দেশের বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো বিভিন্ন দলের শীর্ষনেতাদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইমরান সেই চেষ্টা বানচাল করে দেন। এখন আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে পিটিআই প্রধান কি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করতে চাইছেন!’’
পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের মুখপাত্র হাফিজ় হামদুল্লাও আজ এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘৯ মে-র ঘটনার দায় ইমরান খানকেই নিতে হবে। সেনাঘাঁটির উপরে হামলা চালানো দেশকে আক্রমণ করারই নামান্তর।’’ হামদুল্লার মতে, ‘‘এই কাণ্ডের জন্য ইমরানের জেল হবেই।’’
ইমরানের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, গ্রেফতারির আশঙ্কা করছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নিজেও। লাহোরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি ঘোষণা করেছেন, যদি তাঁকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়, তা হলে দলের নেতৃত্ব দেবেন পিটিআই ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মেহমুদ কুরেশি।