নাৎসিদের সঙ্গে আরএসএসের তুলনা ইমরানের

জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে লন্ডনে বসবাসকারী  ভারতীয় এবং পাকিস্তানিদের মধ্যেও। ব্রিটেনে ১১ লক্ষ পাকিস্তানি রয়েছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৪
Share:

ইমরান খান।

সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ এবং জম্মু-কাশ্মীরকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে দেওয়ার জন্য আগেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমালোচনা করেছেন ইমরান খান। এ বার আরএসএসের আদর্শকে নাৎসি মতবাদের সঙ্গে তুলনা করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, মোদী সরকার চলছে আরএসএসের অঙ্গুলি হেলনেই।

Advertisement

রবিবার ইমরান টুইট করেন, ‘‘আরএসএসের হিন্দু আধিপত্য নাৎসিদের আর্য আধিপত্যের মতোই ভয়াবহ। আমার আশঙ্কা, হিন্দুত্বের এই আগ্রাসন ভারত অধিকৃত কাশ্মীরেই থেমে থাকবে না। তার বদলে ভারত জুড়েই মুসলিমদের উপরে দমন-পীড়ন
শুরু হবে এবং অবশেষে নিশানা করা হবে পাকিস্তানকেও।’’

এর পরে কাশ্মীরে গণহত্যা করা হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইমরান। তাঁর টুইট, ‘‘ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে কার্ফু, কঠোর ব্যবস্থা এবং আসন্ন গণহত্যা আরএসএসের মতাদর্শকে প্রকট করেছে। এই মতাদর্শ নাৎসিদের মতাদর্শ থেকেই অনুপ্রাণিত।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘জাতি নির্মূল (এথনিক ক্লেনজ়িং)-এর মাধ্যমে কাশ্মীরের জনবিন্যাস বদলে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। প্রশ্ন হল, গোটা বিশ্ব কি চুপ করে তা দেখবে, যেমন হিটলারের সময়ে তারা চুপ ছিল।’’

Advertisement

এ দিন পাকিস্তান জানিয়েছে, আগামী বুধবার, ১৪ অগস্ট তাদের স্বাধীনতা দিবসটি ‘কাশ্মীর সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করবে তারা। কাশ্মীর প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড়ে উঠেপড়ে লেগেছে পাকিস্তান। আজ ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানির সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে ফোনে কথা বলেন ইমরান। এর আগে ব্রিটেন ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও সৌদির রাজাকেও ফোন করেছিলেন তিনি। চিনের সমর্থন নিয়ে তাঁরা ভারতের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যাবেন বলে ফের জানান ইমরান।

জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে লন্ডনে বসবাসকারী ভারতীয় এবং পাকিস্তানিদের মধ্যেও। ব্রিটেনে ১১ লক্ষ পাকিস্তানি রয়েছেন। সে দেশে কত জন কাশ্মীরি রয়েছেন, তার কোনও সরকারি হিসেব না থাকলেও সেখানে ভারতীয়ের সংখ্যা ১৪ লক্ষ। কাশ্মীরের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা লন্ডনবাসী সিকন্দর খানের কথায়, ‘‘দুই সম্প্রদায়ের কাছেই এটি খুবই সংবেদনশীল একটি বিষয়। আমার আশঙ্কা, এই বিষয়টি দুই সম্প্রদায়ের সম্পর্ককে বিষিয়ে দিতে পারে। তা যাতে না হয়, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’’

সিকন্দরের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার ভারতের স্বাধীনতা দিবস। সে দিন লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা করেছে কাশ্মীরপন্থী গোষ্ঠী। পাল্টা বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিজেপিপন্থী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশরা। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের স্বার্থরক্ষার জন্য ১৯৮০ সালের শেষ দিকে লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইন্দো ইউরোপিয়ান কাশ্মীর ফোরাম’। তার সভাপতি কৃষ্ণ ভান-ও বলেন, ‘‘আমরা ব্রিটিশ ভারতীয়দের সমর্থন করেছি। ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিলোপ কাশ্মীরকে সুন্দর ভবিষ্যৎ দেবে।’’ ব্রিটেনে বসবসকারী পাাকিস্তানি বংশোদ্ভূতেরা আবার ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিদেশ দফতর এবং রাষ্ট্রপুঞ্জে চিঠি লিখেছেন।

এই টানাপড়েনের মধ্যেই উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন লন্ডনের সোহেল নাস্তি। কাশ্মীরে রয়েছে তাঁর পরিবার। লন্ডন থেকে পরিবারের সঙ্গে সমানে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন সোহেল। কিন্তু উপত্যকার মোবাইল, ল্যান্ডফোন, ইন্টারনেট পরিষেবা— সবই বিপর্যস্ত। তাই কিছুতেই যোগাযোগ করে উঠতে পারছিলেন না সোহেল। অবশেষে উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। সোহেল বলেন, ‘‘ওরা বলেছে, কাশ্মীরে সব কিছু স্বাভাবিক। চিন্তার কিছু নেই।’’ তবুও মন মানে না সোহেলের। তাঁর আশা, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি কাশ্মীরের সব অস্থিরতা কেটে যাবে। আমি আমার পরিবার, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে পারব। শীঘ্রই কাশ্মীরে যেতেও পারব। আমার সুন্দর কাশ্মীর এখন আঁধারে ডুবে রয়েছে। আমার প্রার্থনা, শীঘ্রই কাশ্মীর আলোয় ফিরে আসবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement