তিনি ছিলেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ অফিসার। অথচ তাঁকেই অসহায় ভাবে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছিল ভারতে।
পকেটে মাত্র ২০ টাকা নিয়ে পালিয়ে আসা সেই অফিসার ভারত থেকে শুরু করলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কাজ। হয়ে উঠলেন মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষক।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক তিনি। তাঁর মাথার উপর আজও মৃত্যুর সাজা ঘোষণা করে রেখেছে পাক সরকার।
কাজি সজ্জাদ আলি জাহিরের জন্ম ১৯৫১ সালে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায়। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের একজন যোদ্ধা তিনি।
বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সাহসিকতার জন্য বীর প্রতীক সম্মানে ভূষিত করেছে এবং ২০২১ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সম্মান পদ্মশ্রীতে ভূষিত করেছে।
১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। পাকিস্তানের কাকুল মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে তিনি প্রশিক্ষণ নেন। তার পর পাক সেনার গোলন্দাজ বাহিনীতে উচ্চপদস্থ পদে যোগদান করেন।
কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতেই তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসেন ভারতে। ভারতে থেকেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা হয়ে ওঠেন।
১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অংশ হওয়ার কারণে অনেক কিছুই তিনি জানতেন। ভারতীয় সেনাদের সেই পরিকল্পনাগুলির কথা জানিয়ে সাহায্য করেন তিনি।
এই কারণে পাকিস্তানে তাঁর ফাঁসির সাজা হয়। কিন্তু ভারতে চলে আসার কারণে পাক সেনা তাঁকে ফাঁসি দিতে পারেনি। আজও এই সাজা বহাল রয়েছে।
তিনি দেখেছিলেন কী ভাবে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর নির্যাতন চালায় পাক সেনা। কোনও ভাবেই তা মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া, একের পর এক নিরীহ মানুষকে খুন করা, ধর্ষণের মতো নৃশংস অত্যাচার ছিল তারই অঙ্গ।
আওয়ামি লিগ নেতা মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর পাক সেনার নির্যাতন আরও বেড়ে গিয়েছিল। নিরীহ মানুষদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাতে শুরু করে তারা।
তিনি ছিলেন পাক সেনার গোলন্দাজ বাহিনীর কর্তা। কিন্তু তাঁর বাহিনী কী ভাবে নিরীহ মানুষগুলোর উপর অত্যাচার চালাচ্ছে তা কানে পৌঁছনোর পর আর স্থির থাকতে পারেননি।
পকেটে মাত্র ২০ টাকা আর কিছু জামাকাপড় নিয়ে দেশ ছাড়েন সাজ্জাদ আলি। উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা হওয়া।
ভারতে পৌঁছনোর পর মুক্তিবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু বিষয়টি পাক সেনা জানতে পারার পর ঢাকায় তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর মা এবং বোন কোনওক্রমে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন সে সময়।
১৯৭১ সালে যুদ্ধের অবসান হয়। স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
২০১৩ সালে বাংলাদেশের অসামরিক সম্মান ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে’ সম্মানিত করা হয় তাঁকে। ৭০ বছর বয়সি কাজি সজ্জাদ আলিকে এই বছর ভারত সরকার পদ্মশ্রী পুরস্কার দেয়। সেই যুদ্ধের কথা স্মরণ করে অন্তত ৫৪টি বই লিখেছেন তিনি।