ছবি রয়টার্স।
বিশ্বের উন্নততম অংশ। ধনী মহাদেশ, তাই ঝাঁ চকচকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কোভিডের টিকাকরণেও বহু এগিয়ে এই অঞ্চল। যদিও এই ইউরোপই বার বার করোনা সংক্রমণের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠছে। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিমারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত, ইউরোপে করোনা-সংক্রমিতের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। তা গোটা বিশ্বের মোট করোনা-আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
গত দু’বছরে ইউরোপীয় অঞ্চলের ৫২টি দেশে (অতলান্তিক উপকূল থেকে রাশিয়া, আজ়ারবাইজান) মোট ১০ কোটি ৭৪ হাজার ৭৫৩ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে বিশ্বের মোট সংক্রমণ সংখ্যা ২৯ কোটি ৫৪ হাজার ৪৮৯ জন। অর্থাৎ বিশ্বের তিন ভাগের এক ভাগই আক্রান্ত এই অঞ্চলে।
তবে বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, ইউরোপের এই ১০ কোটি সংক্রমণের মধ্যে আধ কোটি সংক্রমণ ঘটেছে গত সাত দিনে। ৫২টি দেশের মধ্যে ১৭টি দেশে প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড সংক্রমণ ঘটছে। শুধু ফ্রান্সেই এক সপ্তাহে ১০ লক্ষের বেশি সংক্রমণ ঘটেছে। প্রতি এক লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে কোভিড পজ়িটিভ হওয়ার সংখ্যাতেও এগিয়ে ইউরোপের দেশগুলি। ডেনমার্কে ২০৪৫। সাইপ্রাসে ১৯৬৯। আয়ারল্যান্ডে ১৯৬৪। সমীক্ষার রিপোর্টে এই সংখ্যাগুলি উল্লেখ থাকলেও বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। বহু সংক্রমিতের নাম সরকারি খাতায় নথিভুক্ত নেই।
মন্দের ভাল এই যে, ইউরোপে ডেল্টা কমে ক্রমশ ওমিক্রন স্ট্রেনে আক্রান্ত বাড়ছে। এটি ডেল্টার থেকেও ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক। কিন্তু এই সংক্রমণে রোগীর বাড়াবাড়ি কম হতে দেখা যাচ্ছে। ফলে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু তেমন হচ্ছে না। তাই ইউরোপে সংক্রমণের রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হলেও মৃত্যু নিম্নগামী। গত সপ্তাহে গোটা ইউরোপে দিনে গড়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৪১৩ জনের। যা সর্বোচ্চ গড় দৈনিক মৃত্যুর (দিনে ৫৭৩৫ জন) থেকে কম।
আমেরিকার অবস্থাও ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। গোটা অতিমারিতে সংক্রমণ তালিকার শীর্ষে থেকেছে আমেরিকা। ৫ কোটি ৫৮ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এ দেশে। প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ৮ লক্ষ মানুষ। গত কয়েক মাসে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল সংক্রমণ। কিন্তু ফের পরিস্থিতি জটিল। ফের দিনে আড়াই লক্ষ মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। ২০২১-এর শেষ সপ্তাহে ২৭ লক্ষের বেশি মানুষ করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েছেন। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তার আগের সপ্তাহের থেকে সংক্রমণ হার ১০৫ শতাংশ বেশি!
অধিকাংশ দেশেই নতুন বছর শুরু হয়েছে ম্রিয়মান ভাবে। প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক— উৎসব বাতিল করেছে বেশির ভাগ দেশের সরকার। ব্যতিক্রম দুবাইয়ের মতো কিছু শহর। এই দুবাইয়েই বছরের প্রথম দিনটা কাটাতে গিয়েছিলেন ২৬ বছর বয়সি পর্যটক লুজেন ওরফি। বললেন, ‘‘আনন্দ না-করলে জীবন এ ভাবেই কেটে যাবে। আমি সুস্থ, ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজ় নেওয়া আছে। আমি আনন্দ করব।’’ অতিমারির দু’বছর ভয়ে ভয়ে পার করে অনেকেই ক্লান্ত। অনিশ্চয়তা ও মন খারাপ গ্রাস করছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে।