সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আজ একই সঙ্গে বিশ্বের প্রধান শক্তিধর দু’ই দেশকে পাশে পেল ভারত।
গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের অতিথি হিসেবে দিল্লিতে ছিলেন বারাক ওবামা। এ বারের অতিথি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ আজই ভারতে এসেছেন। পঠানকোট হামলা নিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাস প্রতিরোধে আজ পাকিস্তানের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছেন ওবামা ও ওঁলাদ দু’জনেই।
মার্কিন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ভারত সফরে এলে একই সঙ্গে ইসলামাবাদকেও ছুঁয়ে ভারসাম্য রাখতেন। গত বছর ওবামাই প্রথম সেই প্রথা ভেঙে পাকিস্তানকে বার্তা দেন। এ দিন ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে পঠানকোটে জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ টেনে ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য— ‘‘এই সন্ত্রাস ক্ষমার অযোগ্য। সে দেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পাকিস্তানের।’’ ইসলামাবাদের উপর চাপ বাড়িয়ে ওবামা বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান কতটা দায়বদ্ধ, সেটা তাদের দেখানোর সময় এসেছে।’’
পুরনো বন্ধু পাকিস্তানকে রেয়াত করে আসার যে নীতি মার্কিন প্রশাসন বরাবর নিয়ে এসেছে, ওবামার আমলে তার কিছুটা পরিবর্তন চোখে পড়েছে। ক্ষমতায় এসেই তিনি ঘোষণা করেছিলেন, পাকিস্তানে লুকিয়ে রয়েছেন ওসামা বিন লাদেন। তার পরে পাকিস্তানের মাটিতে অভিযান চালিয়ে আল কায়দার এই নেতাকে নিকেশ করে মার্কিন কম্যান্ডোরা। এ দিন ওবামা বলেন, ‘‘ভারত দীর্ঘদিন ধরে যে সন্ত্রাস সহ্য করে চলেছে, পঠানকোটের হামলা তার আরও একটি নিদর্শন। পাকিস্তানে ছড়ানো সন্ত্রাসের জাল সে দেশের সরকারকেই ছিঁড়তে হবে।’’ ওবামা সাফ বলেন, সন্ত্রাসকে লালন করার নীতির পরিণাম যে কী ভয়ানক হতে পারে, উত্তর পশ্চিম পাকিস্তানের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি হানা তার প্রমাণ। ওবামা জানিয়ে দেন, সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে রয়েছে আমেরিকা।
পঠানকোটের আগেই প্যারিস। কিছু দিন আগেই সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিদের আক্রমণে রক্তাক্ত হয়েছে ফ্রান্সের রাজধানী শহর। স্বাভাবিক ভাবেই পঠানকোট সন্ত্রাস নিয়ে তাঁর গলায় সমব্যথীর সুর। আজ চণ্ডীগড়ে নেমেই ওঁলাদ সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘ফ্রান্স মনে করে এই সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার ভারতের রয়েছে।’’ ভারত বরাবর দাবি করে আসছে পঠানকোটের হামলাকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে পাকিস্তান থেকে। কূটনৈতিক পথে আন্তর্জাতিক মহলকেও সে দাবির কথা জানানো হয়েছে। তার পরে ওঁলাদের এই মন্তব্যের নিশানা যে পাকিস্তান, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বভাবতই চওড়া হয়েছে তাঁকে স্বাগত জানাতে আসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর
মুখের হাসি। চণ্ডীগড়ের রক গার্ডেনে মোদী বলেন, ‘‘প্যারিসে জঙ্গি হামলার পরই ঠিক করি প্রজাতন্ত্র দিবসে এ বার ফরাসি প্রেসিডেন্টকেই
আমন্ত্রণ জানাব। কেন না, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে চাই আমরা।’’ ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে মজবুত করাটাই তাঁর এই সফরের লক্ষ্য। কিন্তু সন্ত্রাসের শিকার ফ্রান্সের প্রতিনিধি হয়ে তিনি এসেছেন ভারতে, যারাও দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদীদের চাঁদমারি। সুতরাং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুই দেশ যে হাতে হাত মিলিয়েই চলবে,
সেটাই স্বাভাবিক।