চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
শরীর-মন ভাল রাখতে যোগব্যায়াম জরুরি। ব্যস্ত জীবনে ক্রমশ গুরুত্ব বাড়ছে শরীরচর্চার। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, শরীরচর্চার সেই সময়টা কোথায়? কর্পোরেট কর্মজীবন অনেকেরই জীবনের ঘড়িটাকে উল্টে দিয়েছে। অথচ কেবল রোগা হতেই নয়, নানা রকম রোগবালাই ঠেকিয়ে রাখতেও নিয়ম করে যোগাসন করা একান্ত প্রয়োজন। তবে সঠিক নিয়ম মেনে যোগাসন করলে তবেই মিলবে ফল। শরীর চাঙ্গা রাখতে কোন কোন আসন অভ্যাস করতে পারেন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার অনলাইন। রইল আসন আসান করার পদ্ধতির হদিস। আজকের ব্যায়াম ভুজঙ্গাসন। ‘ভুজঙ্গ’ শব্দের অর্থ ‘সাপ’। সাপের ফণা তোলার মতো ভঙ্গিমায় এই আসনটি করা হয়।
কী ভাবে করবেন?
• প্রথমে উপুড় হয়ে ম্যাটের উপর শুয়ে পড়ুন। পা সোজা করে আরাম করুন। দুই হাতের তালু কাঁধের পাশে মাটিতে রাখুন, কনুই থাকুক শরীর ঘেঁষে। এ বার কপাল মাটিতে রেখে চোখ বন্ধ করুন।
• এটি শুরুর অবস্থান। এই অবস্থানে ভাবনাচিন্তা মন থেকে সরিয়ে শরীর শিথিল (বিশেষ করে শরীরের নীচের অংশ) করার চেষ্টা করুন।
• এ বার ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে মাথা ও বুক উপরের দিকে তুলুন। ভাঁজ করা হাত পাশে থাকবে। কিন্তু, চেষ্টা করবেন হাতে ভর না দিয়ে পেট-সহ শরীরের নীচের অংশে ভর দিয়ে মাথা ও বুক উপরের দিকে তোলার।
• খেয়াল রাখবেন, নাভি যেন মাটি থেকে ৩ ইঞ্চি উপরে ওঠে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নাভির নীচে শ্রোণি অঞ্চল মাটিতে ঠেকে থাকবে। ভুজঙ্গাসনের ক্ষেত্রে এই অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• এ বার দুই হাতে ভর দিয়ে শরীর যতটা সম্ভব উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করুন। মাথা পিছন দিকে হেলিয়ে রাখুন। ঘাড়ে যাতে কিছুটা টান পড়ে, খেয়াল রাখবেন।
• আপনার সুবিধা মতো হাত কনুই থেকে ভাঁজ করে রাখতে পারেন, আবার টান টান করে হাতে ভর দিয়ে শরীর উপরের দিকে তুলতে পারেন। এই অবস্থানে যত ক্ষণ সম্ভব থাকুন। তবে বেশি চাপ দেবেন না।
• এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন। এক রাউন্ড সম্পূর্ণ হল।
• আসন শেষে শবাসনে বিশ্রাম নিন। ২–৩ রাউন্ড ভুজঙ্গাসন অভ্যাস করুন।
সতর্কতা
যাঁদের হাইপার থাইরয়েড, পেপটিক আলসারের সমস্যা বা হার্নিয়া আছে, তাঁরা এই আসন অভ্যাস করবেন না। পিঠে বা কোমরে ব্যথা থাকলে আসনটি না করাই ভাল।
কেন করবেন?
ভুজঙ্গাসন আমাদের নানা শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। যাঁদের একটানা বসে কম্পিউটারে কাজ করতে হয় বলে ঘাড় ও পিঠের পেশি শক্ত হয়ে যায়, তাঁদের এই আসন অভ্যাসে মেরুদণ্ডের পেশিগুলিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও ব্যথার হাত থেকে রেহাই মেলে। শিরদাঁড়ার সমস্যা হলে স্নায়ুতন্ত্রের কাজ করার অসুবিধা হবেই। নিয়মিত ভুজঙ্গাসন অভ্যাস করলে মেরুদণ্ডে রক্ত চলাচল বাড়ে বলে স্নায়ুতন্ত্র উজ্জীবিত হয় ও সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে। যে কোনও স্ত্রীরোগে এই আসনটি অভ্যাস করলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভুজঙ্গাসন করলে ফুসফুস ও বুক প্রসারিত হয় বলে এই আসন হাঁপানির রোগীদের জন্যে অত্যন্ত উপযোগী। নিয়মিত অভ্যাস করলে পেটের মধ্যে থাকা সব ক’টি প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বাড়ে। লিভার ও কিডনি ভাল থাকে, হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।