সলমন রুশদি।
রুশদি কি আরও একবার প্রমাণ করলেন অসির চেয়ে মসির জোর বেশি? নইলে কেন একটা উপন্যাসকে ভয় পেয়ে বারবার তার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে হত্যার চেষ্টা করা হয়? বিতর্কিত উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার অপরাধে শুধু সলমন রুশদিই তো ধর্মীয় মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েননি, এই উপন্যাসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেই হামলার হাত থেকে রেহাই পাননি। কেউ কেউ আবার রহস্যজনক ভাবে মারাও গিয়েছেন। যেমন হিতোসি ইগারাসি। জাপানের এই গবেষক জাপানি ভাষায় ‘স্যাটানিক ভার্সেস’-এর অনুবাদ করেছিলেন। তারপর ১৯৯১ সালে রহস্যজনক ভাবে মারা যান তিনি। সেই মৃত্যুরহস্যের কিনারা এখনও পর্যন্ত হয়নি।
শুধু ইগারাসি নন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অনুবাদকরা, যাঁরা এই উপন্যাসটির অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেই শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৮৯ সালে বইতে ইসলাম ধর্মের অপমান করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ইরানের তৎকালীন প্রধান ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি রুশদির বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন। তারপর থেকেই এই বইয়ের অনুবাদকদের উপর হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়তে থাকে।১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ডের একটি প্রখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা থেকে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে অভিযোগ করা হয় যে, বইটির বিষয়বস্তু ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিচ্ছে।
নরওয়ের যে প্রকাশনা সংস্থা এই বইটি প্রকাশের দায়িত্বে ছিল, সেই সংস্থার কর্ণধার উইলিয়াম নাইগার্ডকে ১৯৯৩ সালে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও দীর্ঘদিন তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছিল। কিন্তু আততায়ীরা অধরাই থেকে যান। বইটির ইটালিয় অনুবাদক এট্টোরে ক্যাপ্রিওলোকেও খাস মিলান শহরে ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তাঁর ঘাড়ে, পিঠে এবং হাতে গুরুতর আঘাত লাগে। আততায়ী দাবি করেন, তিনি ইরানের বাসিন্দা এবং ইসলাম ধর্মের সম্মান রক্ষার্থেই তিনি এই কাজ করেছেন।
তুরস্কের সাহিত্যিক আজিজ নেসিন তুর্কি ভাষায় স্যাটানিক ভার্সেসের অনুবাদ করেছিলেন। ১৯৯৩ সালে পূর্ব তুরস্কের যে হোটেলে তিনি ছিলেন, সেই হোটেলটিকে জ্বালিয়ে দেয় একটি ইসলামিক উগ্রপন্থী সংগঠন। আজিজ অবশ্য প্রাণে বেঁচে যান। বইটি প্রকাশের পর প্রায় ৩৪ বছর কেটে গেলেও বিতর্কের উপাদান যে এক ছটাকও কমেনি, তা রুশদির উপর হামলার ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে দিল। প্রসঙ্গত রুশদির হামলাকারী হাদি মাটার তাঁর আইনজীবী মারফত জানিয়েছেন, রুশদির উপর আক্রমণ চালিয়ে তিনি মোটেও অনুতপ্ত নন।