রানি জিন্দ কউরের হার। ছবি: বনহ্যামসের টুইটার হ্যান্ডল থেকে সংগৃহীত।
লন্ডনে নিলামে উঠল শিখ মহারানির হার। বিক্রি হল প্রায় ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকায়। পান্না ও মুক্তো খচিত হারটির মালকিন ছিলেন মহারানি জিন্দ কউর। অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাবের শিখ মহারাজা রণজিৎ সিংহের শেষ পত্নী তিনি।
মঙ্গলবার লন্ডনে বিশেষ নিলামের আয়োজন করেছিল সেখানকার বেসরকারি সংস্থা ‘বনহ্যামস।’ নাম রেখেছিল ‘বনহ্যামস ইসলামিক অ্যান্ড ইন্ডিয়ান আর্ট সেল।’ ব্রিটিশ রাজত্বের সময় ভারত থেকে নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসপত্ররাখা হয়েছিল। তাতেই জায়গা পায় লাহৌরের রাজকোষের অংশ ওই রত্নখচিত হারটি।
শুরুতে হারটির দাম রাখা হয়েছিল ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার পাউন্ড অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ৭৫ লক্ষ ৫৩ হাজার থেকে ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার মধ্যে। তবে দর হাঁকাহাঁকির পর ১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকায় বিকোয়।
আরও পড়ুন: চালু হল দীর্ঘতম সমুদ্র সেতু
রানি জিন্দ কউরের হারটি সবকিছুকে টেক্কা দিয়েছে। কারণ সেটির বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার জেরে ১৮৩৯ সালে লাহৌরে মৃত্যু হয় মহারাজা রণজিৎ সিংহের। সেই সময় এ দেশে সতীদাহ প্রথা চালু ছিল। রাজার মৃত্যুর পর তাঁর ৪ পত্নী ও ৭ উপপত্নী চিতায় ওঠেন। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন রানি জিন্দ কউর। রাজার উত্তরাধিকারী, শিশুপুত্র দলীপ সিংহকে আগলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
১৮৪৩ সালে মাত্র ৫ বছর বয়সী দলীপ সিংহকে পঞ্জাবের মহারাজা ঘোষণা করা হয়। ‘শিশু রাজা’র প্রতিনিধি হিসাবে কাজকর্ম সামলাতে শুরু করেন জিন্দ কউর। ব্রিটিশ বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সশস্ত্র বাহিনীও গড়ে তোলেন তিনি। কিন্তু যুদ্ধে বন্দী হন।প্রাণ বাঁচিয়ে কোনওরকমে কাঠমাণ্ডু পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তবে সেখানে তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখেন নেপালের তৎকালীন শাসক। পরে ইংল্যান্ড চলে যান তিনি। সেখানে ছেলে ও গয়নাগাঁটি ফিরে পান তিনি। ফিরে পান ওই হারটিও।
তাঁর মৃত্যুর পর দলীপ সিংহের কাছ থেকে লাহৌর থেকে আনা প্রায় সব মূল্যবান জিনিসই কেড়ে নেয় ব্রিটিশ সরকার। প্রায় নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। সেই অবস্থায় ১৮৯৩ সালে প্যারিসে মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও পড়ুন: ২৪০০ বছরের আস্ত একটা জাহাজ, খোঁজ মিলল কৃষ্ণ সাগরে
মঙ্গলবারের নিলামে প্রায় ১৭ কোটি ১৭ লক্ষ ৯১ হাজার টাকার জিনিসপত্র বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বনহ্যামসে ভারতীয় এবং ইসলামি শিল্প বিভাগের প্রধান অলিভার হোয়াইট। তিনি বলেন, ‘‘নিলাম অত্যন্ত সফল হয়েছে। লাহৌর রাজকোষের জিনিসপত্রই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। রানি জিন্দ কউরের ওই হারটি ঘিরে নিলামে উপস্থিত ক্রেতাদের কৌতূহল ছিল দেখার মতো।খুব বেশিবার পরা হয়নি সেটি। খুব ভাল অবস্থায় ছিল। তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। নিলামঘরে তো বটেই, ফোন এবং ইন্টারনেটেও প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।’’
লাহৌর রাজকোষের অন্যান্য জিনিসপত্রের মধ্যে ছিল সোনার সুতোর বাণ্ডিল, ভেলভেটের কাপড়ে মোড়া চামড়ার ধনুক এবং মহারাজা রণজিৎ সিংহের জন্য তৈরি বিশেষ তূণীর। যা ৯৪ লক্ষ ৫১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। পান্না দিয়ে তৈরি মুঘল যুগের একটি তাবিজ বিক্রি হয় প্রায় ১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকায়।