করোনার প্রকোপ বাড়ল রাশিয়ায়। ছবি সংগৃহীত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এত মৃত্যু দেখেনি রাশিয়া। তারা বলছে, ‘মারণ সেপ্টেম্বর’। রাশিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মাসে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ৪৪,২৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ যাবৎ কালে এক মাসে এত মৃত্যু দেখেনি ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। পরিস্থিতি সামলাতে আজ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ‘সবেতন ছুটি’ ঘোষণা করেছে সরকার।
শুক্রবার ‘ফেডেরাল স্যাটিসটিক্স সার্ভিস’-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ৫ লক্ষের কাছাকাছি। এক লাফে মোট মৃতের সংখ্যা এতটা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে সেপ্টেম্বরকেই দেখছে প্রশাসন। সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণ এত বেড়েছে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনের কথা ভাবছে সরকার। শনিবার এক দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০,২৫১ জন।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার অবশ্য আগেই চোখে পড়েছিল। কিন্তু রুশ সরকার লকডাউন করতে চাইছিল না। গত বছরে অর্থনীতি অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে এ দেশে। তাই
নতুন করে ব্যবসা-বাণিজ্য কমাতে চায়নি সরকার। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার অনন্যোপায়।
জনসংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন রুশ বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্সেই রাকশা। তিনি বলেন, ‘‘কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রশাসন যদি এখনও মানসিকতা না বদলায়, নতুন করে সংক্রমণ ঢেউ আছড়ে পড়বে দেশে। সত্যিকারে লকডাউন জারি করতে হবে অবিলম্বে। করোনা-বিধি নিয়ে যথেষ্ট কড়াকড়ি প্রয়োজন। অল্প সময়ের জন্য নয়, বেশ কিছু সপ্তাহের জন্য লকডাউন জরুরি।’’
অ্যালেক্সেই আরও বলেন, গত দেড় বছরে (অর্থাৎ অতিমারি পর্বে) রাশিয়ায় মানুষের গড় আয়ু বেশ অনেকটা কমে গিয়েছে। এখন তা দাঁড়িয়েছে গড়ে ৬৯ বছর। গত বার সংক্রমণ ঢেউ আছড়ে পড়ার পরে কী ভাবে হাসপাতালে শয্যার অভাব দেখা গিয়েছিল, স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল, সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন অ্যালেক্সেই। তাঁর পরামর্শ, অবিলম্বে টিকাকরণ বাড়ানো হোক। আগের মতো ফের কঠোর করোনা-বিধি জারি হোক। আরও একটি বিষয় হল, দেশজ কোভিড-টিকা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ায় মাত্র ৪৭ শতাংশ বাসিন্দার এখনও পর্যন্ত টিকাকরণ হয়েছে।
টিকাকরণে যে খামতি রয়েছে, তা মেনে নিয়েছে সরকারও। দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী তাতিয়ানা গোলিকোভা। তিনি বলেন, ‘‘কোভিড আক্রান্ত হয়ে যে ভাবে দেশে মৃত্যু বাড়ছে, তা খুবই চিন্তার। টিকাকরণ হার সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু সেটা একেবারেই
যথেষ্ট নয়।’’
এ দিকে আজ আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের উৎস, কোনও দিনই জানা সম্ভব হবে না। এই নিয়ে তারা নতুন একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে লেখা হয়েছে যে, ভাইরাসটির প্রাকৃতিক নিয়মে উৎপত্তি কিংবা গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়া, দু’টি তত্ত্বই যুক্তিযুক্ত। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, প্রথম সংক্রমণ কী ভাবে ঘটেছিল, তা নির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব। অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, জৈবাস্ত্র (বায়ো-ওয়েপন) হিসেবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটানো হয়েছিল কি না। আমেরিকান গোয়েন্দারা সেই তত্ত্বও নস্যাৎ করে দিয়েছেন।