নওয়াজ় শরিফ ও মেয়ে মরিয়ম
জেলে নওয়াজ় শরিফ। তবু ভোটের মুখে সব জল্পনা তাঁকে ঘিরেই। শোনা যাচ্ছে, তাঁর কিডনি বিকল হওয়ার মুখে। মাঝে মাঝেই অনিয়মিত ঠেকছে হৃদ্স্পন্দন। তবু পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই নওয়াজ় ও মেয়ে মরিয়মকে ভোটের আগে জেল থেকে বেরোতে দিতে চায় না বলে অভিযোগ। সম্প্রতি দেশের প্রধান বিচাপতির কাছে এমন চাপ এসেছে বলে গত কালই জানিয়েছেন ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি।
আজ আবার বন্দি নওয়াজ়কেই নিশানায় রেখে তোপ দাগলেন তেহরিক-এ-ইনসাফের প্রধান ইমরান খান। ভোটের আগে আজ করাচিতে শেষ বেলার প্রচারে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘নাগাড়ে ভারতের স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন নওয়াজ়। জেলে বসেও ষড়যন্ত্র করে চলেছেন, কী ভাবে ভোট ভেস্তে দেওয়া যায়। ভোটে রিগিং হবে বলে অমূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সবটাই নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে।’’
কিন্তু কেন? প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থাকা ইমরানের দাবি, দল কোণঠাসা বুঝতে পেরেই উল্টো খেলা খেলছেন নওয়াজ়। দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের জেল হয়েছে তাঁর। এতে তার দলের ভাবমূর্তিও ধাক্কা খেয়েছে বলে এখন ভারত-সহ অন্য আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে ঘোঁট পাকাচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী। পাক-ভোটে রিগিং হবে বলে প্রচারের পিছনে ভারতীয় গণমাধ্যমেরও কালো হাত আছে বলে দাবি করেছেন ইমরান। একইসঙ্গে ইমরান বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক স্তরে দেশের সেনাবাহিনীকে গালমন্দ করাটাও অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন নওয়াজ়। আর নির্লজ্জের মতো ভারতের সঙ্গে ভিড়তে চেয়ে বলে বেড়াচ্ছেন, মুম্বই হামলার পিছনে পাকিস্তানের হাত ছিল।’’
এ দিকে দেশেরই একাধিক সংবাদমাধ্যম বলছে, জেলে ভাল নেই নওয়াজ়। তাঁর রক্তে ইউরিয়া এবং নাইট্রোজেনের মাত্রা বিপজ্জনক সীমায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রচুর ঘামছেন, তাই শরীরে জলাভাব দেখা দিয়েছে। কিডনিও বিকল হতে চলেছে। জেলের হাসপাতালে সুবন্দোবস্ত নেই বলেই দ্রুত তাঁকে অন্যত্র সরানোর সুপারিশ করেছে মেডিক্যাল বোর্ড। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে কালই তাঁকে দেখে গিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এখন তদারকি সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই দেখার।
শোনা যাচ্ছে, আইএসআই চাইছে না নওয়াজ় জেল থেকে বেরোন। কাল রাওয়ালপিন্ডি বার অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে এই তথ্য দিয়ে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি শওকত সিদ্দিকি বলেন, ‘‘দেশের বিচারব্যবস্থা আর সংবাদমাধ্যম— সবটাই এখন বন্দুকওয়ালার (সেনার) নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। সত্তর বছরের ইতিহাসে অর্ধেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেছে সেনা। এখন পাকিস্তান না মুসলিম দেশ, না গণতান্ত্রিক।’’ এখন থেকেই বুথে বুথে সেনাদের ব্যাপক উপস্থিতি নির্বাচনে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। সোমবার জানা গিয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের করানোর জন্য দেশজুড়ে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সেনা মোতায়েন করতে হবে।
সিদ্দিকির আরও অভিযোগ, মামলা বুঝে আইএসআই-ই বিচারপতিদের বেঞ্চ ঠিক করে দেয়। নওয়াজ়-মরিয়মের মামলাতেও সেনাবাহিনীর গুপ্তচর সংস্থা প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করছে বলে জানান সিদ্দিকি। তাঁর দাবি, প্রধান বিচারপতি করে দেওয়ার টোপ দিয়ে তাঁকেও দলে টানতে চেয়েছিল আইএসআই। তাতে কাজ না-হওয়ায় প্রধান বিচারপতিকে তারা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, ওই বেঞ্চে যেন সিদ্দিকিকে না রাখা হয়। প্রধান বিচারপতি নাকি সেটা মেনেও নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিদ্দিকি। ভোটের পরেই নওয়াজ়ের আপিল মামলা শুনবে আদালত।