বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষে আলোর সাজ ঢাকায়। নিজস্ব চিত্র।
সেই বহু পরিচিত দৃপ্ত কণ্ঠস্বর। ‘‘এ বারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, ...স্বাধীনতার সংগ্রাম…জয় বাংলা।’’ বক্তা বঙ্গবন্ধু।
হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন তৈরি করোনা কেন্দ্রে পৌঁছনোর আগেই পেল্লাই ডিজিটাল স্ক্রিন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের সেই বিখ্যাত বক্তৃতার সাদা-কালো ভিডিয়ো চলছে। ঢাকার মোড়, পাড়া, দেওয়াল, রাস্তার ধার, বিলবোর্ড— সর্বত্র তিনি। কোথাও ছবিতে তাঁর সঙ্গে কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, কোথাও বঙ্গবন্ধু বক্তৃতারত, কোথাও ছবিতে-গল্পে তাঁর কৈশোর-যৌবনের কথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধ শতক আর বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষে যেন আবেগের কার্পেট পেতেছে ঢাকা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শরিক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই আবেগ দিয়েই বরণ করতে চায় শেখ হাসিনার সরকার।
২০২১ সালে পঞ্চাশ বছর পূর্তি হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরও। বিশেষ অতিথি হিসেবে মোদী আগামীকাল, শুক্রবার জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে বক্তব্য রাখবেন। আজ তিনি বলেন, “কোভিড সংক্রমণ শুরুর পরে আমার প্রথম বিদেশ সফর সেই বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশে, যার সঙ্গে ভারতের গভীর সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং মানবিক সংযোগ রয়েছে।” মোদীর মতে, বঙ্গবন্ধু গত শতাব্দীর অন্যতম মহান নেতা, যাঁর জীবন ও আদর্শ বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে। আসন্ন সফরে হাসিনাকে বাংলাদেশের আর্থিক উন্নতির জন্য অভিনন্দন জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে গত দেড় বছর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, ‘সে বড় সুখের সময় নয়।’ অতিমারির ছোবল রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তি, অবিশ্বাসের কুয়াশা তৈরি হয়েছে। অনুপ্রবেশ, সিএএ, এনআরসি-র প্রশ্নে তিক্ততা বেড়েছে ঢাকার সঙ্গে। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, এ সব কাটাতে গত কয়েক মাসে সক্রিয়তা কম ছিল না নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা সফর করে এসেছেন। শ্রিংলা জানাচ্ছেন, “প্রধানমন্ত্রী অতিমারির পরে এই প্রথম দেশের বাইরে সফর করছেন। বোঝা যাচ্ছে, প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব কতটা।”
আগামীকাল মোদী বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ সাভারে গিয়ে সম্মান জানাবেন। বাপু-বঙ্গবন্ধু প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন। সন্ধ্যায় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর গানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। ২৭ তারিখ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি দর্শনের পরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরীর মন্দিরে পুজো দেবেন। সে দিনই ওড়াকান্দিতে মতুয়াদের মন্দিরেও যাবেন মোদী। ফিরে হাসিনার সঙ্গে বৈঠক।
বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে কয়েকটি চুক্তিপত্র সই হওয়ার পাশাপাশি একটি যৌথ ঘোষণাপত্রও প্রকাশিত হওয়ার কথা। বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত সংযোগ বাড়ানো দু’দেশেরই অগ্রাধিকার।’’ তিনি জানান, এ বারের আলোচনার পরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সংলগ্ন বাংলাদেশ সীমান্তে আরও দু’টি বর্ডার হাট-এর ঘোষণা হবে। ঢাকা সূত্রের খবর, মোদী-হাসিনা বৈঠকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে ভারতের ভূমিকা জোরদার করতে অনুরোধ করবে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে মেয়াদ শুরু হয়েছে নয়াদিল্লির। বাংলাদেশের বক্তব্য, তা কাজে লাগিয়ে মায়ানমারকে বোঝাতে সক্রিয় ভূমিকা নিক মোদী সরকার। এ নিয়ে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি না-দিলেও শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রাক্কালে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে শরণার্থীদের জন-পরিকাঠামো সংক্রান্ত উদ্যোগের কথা তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন যাতে দ্রুত এবং স্থায়ী হয়, সে জন্য আমরা আবাসন প্রকল্প, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করছি।’’