নাভালনির স্মৃতির উদ্দেশে। শনিবার সেন্ট পিটার্সবার্গে। ছবি: রয়টার্স।
‘আলেক্সেই নাভালনি ছিলেন আমাদের স্বাধীনতা ও আশার প্রতীক।’— বছর ২৮-এর পাভেল এলিজ়ারভ এখন পর্তুগালের বাসিন্দা। তবে বুকের মধ্যে পুষে রেখেছেন রাশিয়াকে। চূড়ান্ত
ভাবে নাভালনির সমর্থক এই যুবকের দাবি, পুতিনেরই হাত রয়েছে এই মৃত্যুর পিছনে।
পুতিন-বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির মৃত্যু ঘিরে ঘনিয়েছে রহস্য। তাঁর পরিজন ও সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়েছে শোকের হাওয়া। সঙ্গে মিশেছে ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের হাত ধরেই সমাজমাধ্যম থেকে রাজপথ— সর্বত্র প্রতিবাদে শামিল তাঁরা।
ক্ষোভের অন্যতম কারণ, নাভালনির দেহ এখনও ফেরানো হয়নি তাঁর পরিবারের কাছে। শনিবার মা লুদমিলা ও আইনজীবী লিওনিড সোলোভিভ পৌঁছন রাশিয়ার সালেখার্দ শহরে। আর্কটিক সার্কল জেল থেকে জানানো হয়, সেখানেই আছে নাভালনির দেহ। কিন্তু, পৌঁছনোর পরে তাঁরা দেখেন। মর্গের দরজা বন্ধ। বহু কষ্টে জানা যায়, দেহ সেখানে নেই। একটি সামাজিক মাধ্যমে শনিবারই এই কথা বলে অভিযোগ জানান নাভালনির সমর্থকরা। রুশ প্রশাসনের একাংশের দাবি, দেহ ময়নাতদন্তে গিয়েছে।
বিষয়টি স্পর্শকাতর বলেই রুশ প্রশাসন খুব সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ করছে। নাভালনির মৃত্যুর পর থেকেই রুশ প্রশাসনের ঠোঁটের গোড়ায় স্রেফ একটিই কথা— ঠিক কী কারণে নাভালনির মৃত্যু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বস্তুত, এই মৃত্যু ঘিরে খানিক অস্বস্তিতেই রয়েছে রাশিয়া। পুতিন সমালোচকরা অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তাঁদের দাবি, নাভালনি যে এত দিন বেঁচে ছিলেন সেটাই অনেক। পুতিন জমানায় তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন যাঁরা, সকলেরই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়েছে। সেই তালিকায় সম্প্রতি হত ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন থেকে আলেকজ়ান্ডার লিটভিনেঙ্কো, আনা পোলিটকোভস্কায়া, সের্গেই ম্যাগনিটস্কি, বরিস বেরেজ়ভস্কি, বরিস নেমটসভ-সহ বহু নাম রয়েছে।
তবু প্রতিবাদের আঁচ জ্বলছে। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে নাভালনিকে স্মরণের পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাঁদের বেশির ভাগ রুশ অভিবাসী। কারও কারও হাতে প্ল্যাকার্ডে সরাসরি পুতিনকে খুনি বলে অভিযুক্ত করা। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, বার্লিনে এমন একটি মিছিলে কম করে ৬০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। শহরের উন্টার ডেন লিন্ডেন বুলেভার্ডে রুশ, জার্মান ও ইংরাজিতে ক্রমাগত পুতিন-বিরোধী স্লোগান দিয়ে যান তাঁরা। রুশ দূতাবাসের সামনে নিরাপত্তা আরও কড়া করতে হয় পুলিশকে। ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করা হয় রাস্তা।
লিথুয়ানিয়াতেও প্রায় একই চিত্র। নাভালনির ছবি নিয়ে মিছিল করেন মানুষ। সেই ছবির সামনে দেওয়া হয় পুষ্পস্তবক, জ্বালানো হয় মোমবাতি। একই চিত্র দেখা গিয়েছে রোম, আমস্টারডাম, বার্সেলোনা, সোফিয়া, জেনিভা, দ্য হেগ, লিসবন ও আমেরিকায়। প্রতিবাদ মিছিল দেখা গিয়েছে রাশিয়াতেও। প্রায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিঃশব্দে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা— পুতিন একজন যুদ্ধাপরাধী!
রাজনীতিকদের কথায়, নাভালনির মৃত্যুর ফলে রাশিয়ায় আর বিরোধীপক্ষ বলে কিছু রইল না। রাশিয়ার একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, নাভালনির স্মরণে মিছিল করায় প্রায় ১০০ জনকে আটক করা হয়েছে মস্কোতে। যদিও এই খবরের কোনও সত্যতা এখনও যাচাই করা যায়নি। এই মৃত্যু নিয়ে রাশিয়ার দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে ব্রিটেনও। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দাবি, পুতিনকে এই মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। লন্ডনে রুশ দূতাবাসের কর্তাদের ডাকা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর।