আউং সান সু চি-র মুক্তির দাবিতে মিছিল। সোমবার ইয়াঙ্গনে। ছবি ফেসবুক।
জনরোষে মদত দেওয়া এবং কোভিড বিধি ভেঙে নির্বাচনী প্রচার চালানোর অভিযোগে আউং সান সু চি-কে চার বছরের কারাদণ্ড দিল মায়ানমারের জুন্টা সরকার নিয়ন্ত্রিত এক আদালত। ক্ষমতাচ্যুত নেত্রীর বিরুদ্ধে আরও অন্তত ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে, যেগুলি প্রমাণিত হলে ১০২ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে সু চি-র!
১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে গৃহবন্দি রয়েছেন নেত্রী। গত মাসে জানা যায়, নিজের বাড়ি থেকে কোনও অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নেত্রীকে। আরও খবর ছড়িয়েছিল, তিনি গুরুতর অসুস্থ। সু চি এবং জুন্টার হাতে বন্দি অন্য নেতাদের বিচারের প্রত্রিয়াটিও চলেছে সম্পূর্ণ গোপনে, মায়ানমারের রাজধানী নেপিদয়ের কোনও এক আদালতে। রুদ্ধদ্বার এই মামলায় কোনও বিদেশি প্রতিনিধি, সাংবাদিক, এমনকি সাধারণ মায়ানমারবাসীর প্রবেশও নিষিদ্ধ ছিল। উপস্থিত ছিলেন শুধু সু চি-র আইনজীবীরা। সাজা ঘোষণার পরে সু চি-কে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়েছে কি না, তা-ও সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।
রোহিঙ্গা সমস্যায় তাঁর অস্বস্তিজনক ভূমিকার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে অনেক দিনই জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন ৭৬ বছর বয়সি শান্তির নোবেলজয়ী সু চি। তবু এ ভাবে চুপিসারে তাঁকে জেলে পোরার জন্য সবাই একবাক্যে জুন্টা সরকারের নিন্দাই করছে। আসিয়ান গোষ্ঠীর মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান এবং মায়ানমারের নামকরা আইনজীবী চার্লস সান্তিয়াগোর কথায়, ‘‘এই বিচার-প্রক্রিয়াটি চলেছে অত্যন্ত হাস্যকর ভাবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্য রাষ্ট্রগুলিকে একজোট হয়ে এই প্রহসনের মোকাবিলা করতে হবে।’’
আজ আদালতে সু চি-র বিরুদ্ধে প্রধান যে অভিযোগটি আনা হয়, তা হল নির্বাচনের সময়ে কোভিড বিধি ভঙ্গের। ২০২০-র ৮ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল মায়ানমারে। সেই ভোটে বিপুল সংখ্যক আসন পেয়ে জিতেছিল সু চি-র দল। নির্বাচনী প্রচারের সময়ে সু চি এক দিন তাঁর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়ছিলেন। কোনও জমায়েত না হলেও পথচলতি গাড়ি থেকে সু চি-কে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন অনেকে। তখন সু চি মুখোশ বা ফেস শিল্ড পরে ছিলেন না। সেই ঘটনাটিকেই ‘কোভিড বিধি লঙ্ঘনের চূড়ান্ত উদাহরণ’ বলে আদালতে সওয়াল করেছেন জুন্টা সরকারের আইনজীবীরা। সু চি-কে গৃহবন্দি করার সময়ে গ্রেফতারি পরোয়ানায় তাঁর এই ‘অপরাধের’ উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আরও একগুচ্ছ অভিযোগ আনা হয়, যেমন— রাষ্ট্রদ্রোহে মদত দেওয়া, জনরোষে মদত দেওয়া ইত্যাদি। মামলার প্রতিটি পর্যায়ে সু চি এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত কাল ইয়াঙ্গনে এক সেনা অভ্যুত্থান-বিরোধী জমায়েতে সেনাভর্তি গাড়ির চাপায় নিহত হন কম পক্ষে ৩০ জন। আজ সকালে রায় ঘোষণার পরে দিনভর প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে নেপিদ, ইয়াঙ্গন-সহ বিভিন্ন শহরে। বিক্ষোভকারীদের একটাই দাবি, দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে তাঁদের নেত্রীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।