অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: রয়টার্স।
মুহাম্মদ ইউনূসের নিউ ইয়র্ক সফর অনেকটাই কাছাকাছি টানল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের বাৎসরিক সম্মেলন উপলক্ষে এই সফরে আমেরিকার বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আমেরিকা ও পাকিস্তান-সহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। সেই বৈঠকে দু’দেশের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে সার্ক সংগঠনকে ফের সজীব করার জন্য সওয়াল করেছেন ইউনূস। পাল্টা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ ইসলামাবাদ সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ইউনূসকে। জানিয়েছেন, ইউনূস সরকার বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
নতুন সরকারের সমর্থকেরা ১৫ অগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মদান দিবস পালন করতে দেয়নি। পুড়িয়ে দেওয়া শেখ মুজিবের ধানমন্ডির বাড়ির সামনে হিন্দি গান চালিয়ে উৎসব করেছে তথাকথিত ‘ছাত্র-জনতা’। যাঁরা মুজিবকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন, মারধর করা হয়েছে তাঁদের। যুব লীগের নেতা মোমেন পাটোয়ারিকে পিটিয়ে হত্যাও করা হয়েছে। তার পরে পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্নার মৃত্যুদিন উদ্যাপন করা হয়েছে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে বিভিন্ন বক্তা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ‘পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য ভারতের চক্রান্তের ফলশ্রুতি’ বলে অভিহিত করেন। বাংলাদেশ বেতারে উর্দু অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার ঘোষণা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক বিতর্কিত অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান তো ‘ভারতের হাত থেকে রক্ষা পেতে’ পাকিস্তানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করার পরামর্শও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “পাকিস্তানের সঙ্গে এমন চুক্তি করা হোক, যাতে বাংলাদেশ চাইলেই পাকিস্তান বোমা নিয়ে এগিয়ে আসে।” অধ্যাপকের কথায়, “পাকিস্তান বন্ধু হিসেবে খুবই ভরসাযোগ্য, এটা আমি আপনাদের বলে দিচ্ছি। একাত্তরের জন্য তারা ক্ষমা চায় না একটা ইগো থেকে। কিন্তু মনে মনে তারা ক্ষমাপ্রার্থী।” জামায়াতে ইসলামীর অনুগত এক দল ‘বিশিষ্ট জন’ ঢাকায় পাক হাই কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাংলাদেশের পড়ুয়াদের ভর্তির সুযোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। তার পরে নিউ ইয়র্কে শাহবাজ-ইউনূস বৈঠক ও গলাগলিতে মৌলবাদী সংগঠনগুলি খুবই আহ্লাদিত।
অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার প্রধান উপদেষ্টা পদটির সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের মধ্যেই। তিনি কোন অধিকারে সংবিধান বা নির্বাচনী সংস্কারে কমিশন গঠন করতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ফরহাদ মজহারের মতো গণ-অভ্যুত্থানের মস্তিষ্ক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরাও। বিএনপি-ও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এর চেয়ে বেশি অধিকার তাদের নেই। নিউ ইয়র্কে একটি সাক্ষাৎকারে ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কোনও পরিকল্পনা তাঁর নেই। তেমনই সার্ক পুনরুজ্জীবনের মতো আন্তর্জাতিক প্রয়াসে তাঁর কী
বৈধতা আছে, কূটনীতিকেরা এখন সেই প্রশ্নও তুলছেন।