ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো। ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করার পরে বিদেশ মন্ত্রকের চটজলদি প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘পাকিস্তানের কদর্যতার মানকে বিবেচনায় রাখলেও, এটা হীনতম ঘটনা।’
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারত-পাকিস্তানের বাগ্যুদ্ধের শেষে কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, বেশ কিছু দিন শান্ত থাকার পরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আবারও চরমতম কোনও পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। বিলাবলের গত কালের মন্তব্য হঠাৎ করে করা নয় বলেই ধারণা সাউথ ব্লকের। এর প্রেক্ষাপট এবং সম্পর্কের পরবর্তী গতিপ্রকৃতি নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ ও আলোচনা। শীতকালে অনুপ্রবেশের ঘটনা এমনতিই কমে আসে। তবুও সীমান্তে সজাগ রাখা হয়েছে প্রহরা। চিনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার বিভিন্ন সেক্টরে যখন টানটান উত্তেজনা এবং সংঘাত চলছে ভারতের, তখন ইসলামাবাদের সঙ্গে ফের সংঘাত শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নিঃসন্দেহে রক্তচাপ বাড়াচ্ছে সাউথ ব্লকের।
কেন এত উগ্র হলেন বিলাবল? বিশেষজ্ঞদের মতে, কারণ একাধিক। প্রথমত এবং প্রধানত, গোধরার ঘটনা বা স্মৃতিকে উস্কে দিয়ে মানবাধিকারের তাস খেলতে চাইলেন বিলাবল। সংখ্যালঘু আবেগকেও নাড়াচাড়া করা তাঁর লক্ষ্য। আমেরিকার বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং আমেরিকার কংগ্রেস নিযুক্ত মানবাধিকার কমিটির রিভিউ রিপোর্টগুলি মোদীর শাসনকালে প্রতি বছর ভারতের ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিষয়গুলির দিকে তর্জনি নির্দেশ করেছে। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারার বিলোপের পরে পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, পাকিস্তানে শাহবাজ শরিফের সরকার আমেরিকার সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার জন্য খুবই তৎপর। ট্রাম্পের সময় যা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছিল। নরেন্দ্র মোদী যে এক সময় আমেরিকার ভিসা পাননি, তা খোদ আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়েই মনে করিয়ে দিয়ে মোদী সরকারকে খোঁচা দিতে চেয়েছেন বিলাবল।
পাশাপাশি এই অতি আক্রমণাত্মক হয়ে এবং কাশ্মীর প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তুলে বিলাবল এবং তাঁর দল (পিপিপি) ঘরোয়া রাজনীতিতে নিজেদের কৃতিত্ব কায়েম করতে চাইছে। ইমরান খানের সাম্প্রতিক অতিসক্রিয়তাকে ভোঁতা করতে কাশ্মীর আগামী ভোটের আগে শাহবাজ শরিফের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। সম্প্রতি পাকিস্তানে যে নতুন বিদেশ সচিব নিযুক্ত হয়েছেন, সেই আসাদ মজিদ খান কট্টর ভারত-বিরোধিতার জন্য খ্যাত। বিলাবলের সংলাপের পিছনে তাঁর মস্তিষ্ক রয়েছে বলেই মনে করছে সূত্রের একাংশ। ভারতও অক্টোবর এবং নভেম্বরে সন্ত্রাস-বিরোধী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডেকে সেখানে এবং এ বারের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মুম্বই হামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি প্রচার করে ইসলামাবাদকে কোণঠাসা করছে বারবার।
পাক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এবং পাকিস্তান সম্পর্কে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে কোনও সরকারি চ্যানেল অথবা মেকানিজমের অভাব। পুলওয়ামার হামলার পর দুই প্রতিবেশী দেশ যুদ্ধের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় ধারাবাহিক ভাবে ব্যাক চ্যানেল সংলাপ চলেছিল নয়াদিল্লি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে। ফলস্বরূপ দেখা গিয়েছে, গত বছর কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ২০০৩ সালের সংঘর্ষবিরতি চুক্তিকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। কমেছে সংঘাত। এই ব্যাক চ্যানেল আলোচনা এর পরেও চলেছে, তবে খুবই সীমিত সংস্করণে। কিন্তু শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সংলাপের কাঠামো না থাকায় কোনও ফলাফল দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার সুস্থিতির পক্ষেই পরিস্থিতি বিপদজনক হয়ে উঠছে বলে মনে করা হচ্ছে।