নাম স্বপ্না পাণ্ড্য। তবে লোকে তাঁকে চেনেন স্বপ্না পণ্ডিত নামে। আমেরিকায় বসবাস করা স্বপ্না শুধু মহিলা পণ্ডিত হওয়ার জন্যই পরিচিতি পাননি। তিনি এমন এক জন পণ্ডিত যিনি সমলিঙ্গে বিয়ে দেন। স্বপ্না ওয়াশিংটনের ‘এলজিবিটি পণ্ডিতজি’।
আমেরিকায় এক ভারতীয় পুরোহিত পরিবারে জন্ম স্বপ্নার। মেরিল্যান্ডে থাকার সময় বিয়ের মণ্ডপই ছিল তাঁর খেলার মাঠ। তাঁর ঠাকুরদা পণ্ডিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সে সব দেখে বড় হয়েছেন স্বপ্না। ঠাকুরদা যখন মণ্ডপে মন্ত্র পাঠ করে বিয়ে দিতেন, পাশে বসে খেলা করত ছোট্ট স্বপ্না।
আমেরিকায় হিন্দু-মতে বিয়ে দিতে শুরু করলেন এই মহিলা পণ্ডিত। বহু বিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু নিজের জন্য যোগ্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
আমেরিকায় হিন্দু-মতে বিয়ে দিতে শুরু করলেন এই মহিলা পণ্ডিত। বহু বিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু নিজের জন্য যোগ্য কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
অনেক খোঁজার পর ২০১০ সালে সহর নামে এক পাকিস্তানি-আমেরিকান মহিলার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁর সঙ্গে মেলামেশার পর স্বপ্না উপলব্ধি করেছিলেন সহরই তাঁর উপযুক্ত জীবনসঙ্গী হয়ে উঠতে পারবেন।
এই উপলব্ধির সঙ্গে স্বপ্না সমকামীদের বিয়ের প্রয়োজনীয়তা কতটা তাও বুঝতে পারেন। তার পর থেকেই সমকামীদের বিয়ে দিতে শুরু করলেন তিনি।
হিন্দু পণ্ডিতদের রোষের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। চূড়ান্ত সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। মহিলা হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাঁকে পণ্ডিত হিসাবে মেনে নিতেও চাননি। ঋতুস্রাবের কারণে মহিলাদের শরীর নাকি অপবিত্র, তাই এমন শুভ কাজ তাঁর হাতে সম্পন্ন হোক চাইতেন না অনেকেই।
হাল ছাড়েননি স্বপ্না। স্বপ্নাকে হাল ছাড়তে দেননি সেই সমস্ত সমকামী দম্পতিরা। স্বপ্না যতটা গুরুত্ব দিয়ে এবং যতটা অনুভূতি দিয়ে সমকামীদের বিয়ে দিতেন আর কোনও পণ্ডিত তা করতেন না, দাবি ওই দম্পতিদের। হবু যুগলদের কাছে তাই স্বপ্না হয়ে উঠেছিলেন প্রথম পছন্দ।
সংস্কৃতে মন্ত্র পাঠ করেন, সাত পাক ঘুরিয়ে যাবতীয় নিয়ম মেনে বিয়ে দেন স্বপ্না। সমকামী ছাড়াও অনেক যুগল এখন স্বপ্নার কাছে আসেন। স্বপ্নার হাতেই জীবন শুরু করেন তাঁরা।
সহরের সঙ্গে এখন ওয়াশিংটনে থাকেন তিনি। দু’বছরের এক সন্তানও দত্তক নিয়েছেন তাঁরা।
স্বপ্না যখন ১০ বছরের, সে বারই প্রথম পরিবারের সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন। দেশে পা রেখেই ভালবেসে ফেলেছিলেন তিনি। ভারতের সংস্কৃতি তাঁকে মুগ্ধ করেছিল।
এখন আর সে ভাবে ভারতে যাতায়াত নেই। কিন্তু মনেপ্রাণে স্বপ্না ভারতীয়। ভরতনাট্যম আর কত্থকের মাধ্যমে ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছেন তিনি।